বাংলাধারা প্রতিবেদন »
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অধিকাংশ শিল্প-কারখানা বন্ধ রয়েছে। গত ২৬ মার্চ কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিতে পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানায় বিজিএমইএ। আরেক সংগঠন বিকেএমইএ পোশাক কারখানা মালিকদের প্রতি কারখানা বন্ধের নির্দেশ জারি করে।ফলে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় শিল্প মালিকরাও এখন বন্দর থেকে পণ্যখালাসে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দিনে চার থেকে সাড়ে চার হাজার একক পণ্য ভর্তি কন্টেইনার ডেলিভারি নেন আমদানিকারকরা। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সেই ডেলিভারি কমেছে তিন হাজারে। কিন্তু ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরুর পর ডেলিভারি কমে গড়ে সাড়ে ১২০০ একক কন্টেইনারে নেমেছে। অর্থাৎ ডেলিভারি কমেছে ৭২ শতাংশ। আর পণ্য সরবরাহে ধস নামায় কন্টেইনার রাখার স্থান কমে গিয়ে পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী কয়েকদিনে ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে যাবে বন্দরে পণ্যের স্তূপ।
নভেল করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি চলছে এখন। ছুটির শুরু থেকে দাপ্তরিক কার্যক্রম সীমিত করেছে দেশের সব কাস্টম হাউজ। এসময়ে কেবল রফতানি ও ইপিজেডের কার্যক্রম সচল রাখা, আমদানির ক্ষেত্রেনিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জরুরি চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবাসামগ্রীর শুল্কায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল কাস্টম হাউজগুলো।
তবে বন্দরেরডেলিভারি কার্যক্রম পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে ৩০ মার্চ নতুনএকটি অফিস আদেশ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। সেখানেশিল্পের কাঁচামাল এবং সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার আমদানিপণ্যের শুল্কায়নে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে কাস্টম হাউজগুলোকে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, সাধারণ ছুটির পর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামায় শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে দুদিন কাজ বন্ধ ছিল। সেই কর্মঘণ্টা ছাড়া বন্দরের কাজ পুরোপুরি স্বাভাবিক ছিল আর পণ্য ডেলিভারিতে চট্টগ্রাম বন্দর সম্পূর্ণ প্রস্তুত ছিল। ছুটির দিনে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক খোলা রেখেছে দিনে দুই ঘণ্টা। শিপিং এজেন্টও অফিস খোলা রেখে দুই ঘণ্টা কার্যক্রম চালাচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসও সীমিত পরিসরে কার্যক্রম চালাচ্ছে। মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে কোনো বাধা নেই। ভোগ্যপণ্যের বড় আড়তগুলো খোলা আছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সাধারণ ছুটিতে শিল্পকারখানাগুলো বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে আমদানি পণ্য নেওয়া কমে গেছে। আড়তগুলো চালু থাকলেও বেচাকেনা সীমিত হয়ে গেছে। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে তো চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যাবে।
চেম্বার সভাপতি বলেন, সারা দেশে কোনোভাবে যাতে পণ্য সরবরাহ ব্যাঘাত না হয় এবং কেউ যাতে অনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে সেজন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন সচল রাখতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে ডেলিভারি বাড়বে। একই সাথে ফল ও খাদ্যপণ্য ছাড় করতে বিশেষ ব্যবস্থায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ দপ্তর ও আণবিক শক্তি কমিশনের অফিস খোলা রাখার অনুরোধ জানাই। একই সাথে সারা দেশে দোকানপাট বন্ধ থাকায় পণ্য বাজারেও বেচাকেনা কমে গেছে। ফলে ছুটির মধ্যে অনেকেই বন্দর থেকে পণ্য সরবরাহ নিচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বহির্নোঙর ও জেটিতে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম এখনো ঠিক রয়েছে। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। শিল্পপণ্যের শুল্কায়ন শুরু হলে আশা করছি বন্দর থেকে পণ্যের ডেলিভারি কিছুটা উন্নতি হবে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













