তারেক মাহমুদ »
দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রভাবে বেড়েছে জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। করোনায় ত্রাণ বিতরণের কারণে হঠাৎ চড়া মোটা চাল ও মসুর ডালের দাম। মাস ব্যবধানে পাইকারিতে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে আমদানি করা মসুর ডালের দর উঠেছে ৭৮ টাকা। তবে বাজারে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে সবজি। করোনা ভাইরাসের এই আতঙ্কের মধ্যে নতুন করে বাড়েনি সবজির দাম।
বর্তমানে করোনায় দরিদ্র মানুষদের দুবেলা আহারের যোগান দিতে চলছে দেশব্যাপী ত্রাণ বিতরণ। এতেই মিলমালিক ও ব্যবসায়ীদের কাছে সোনার হরিণ হয়ে উঠেছে মোটা চাল।
নগরীর পাহাড়তলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা, পাইজাম ও লতা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি এবং স্বর্ণ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পূর্বে মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা, পাইজাম ও লতা ৪২ থেকে ৪৮ টাকা এবং স্বর্ণা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
আড়তদাররা বলছেন, ত্রাণ বিতরণের কারণে বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়েছেন মিল মালিকরা। এরসাথে যোগ হয়েছে শ্রমিক খরচ, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি। পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগও তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে মিল মালিকরা বলছে, গাড়ি সমস্যার কারণে এটা হচ্ছে। ভাড়া ডাবল দিতে হচ্ছে। গাড়ি আসছে মাল নিয়ে কিন্তু যাচ্ছে খালি।
এদিকে, মাঝারি দানার মসুর ডাল গত সপ্তাহে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হয়েছিল, তা এখন বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি হয়েছে। বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। আর ছোট দানার মসুরের ডালের দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে।
পাইকারিতে খেসারি ডাল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকায়। প্রতিকেজি ছোলার দর উঠেছে ৬৫ টাকা পর্যন্ত।
তাছাড়া গত সপ্তাহে ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া খোলা আটার দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
হঠাৎ করে মসুর ডাল ও আটার দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাহাড়তলীর ব্যবসায়ী আলমগীর বাংলাধারাকে বলেন, পাইকারিতে ডাল ও আটার দাম বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে সরবরাহ। বাড়তি দামে কেনার কারণে আমরাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সবশেষ তথ্যমতে, বিশ্ববাজারে কমেছে বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম। সরকারি হিসাবেও দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
পাহাড়তলী বাজারে চাল কিনতে রিকশাচালক হাবিব বলেন, এখন রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামলেও আয় তেমন হয় না। যা ভাড়া মারি তার প্রায় সবই গ্যারেজে জমা দিতে হয়। অল্প কিছু টাকা হাতে থাকে। এই চাল, ডালের যে দাম এই টাকা দিয়ে তিন বেলা কিনে খাওয়া সম্ভব না। করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা খুব কষ্টে আছি। এ সময় চাল-ডালের দাম কম থাকলে পরিবার নিয়ে দুমুঠো খেতে পারতাম।
এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে একই দামে, প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পাকা টমেটো ২৫ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ২০ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিছুটা দাম কমেছে কাঁচামরিচ ও পেঁয়াজের। ১৫-২০ টাকা পোয়া (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ এখন ১০-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। অবশ্য রসুন ও আদার দামে এখনও বেশ চড়া। আমদানি করা রসুন ১৭০-১৮০ এবং দেশি রসুন ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা।
সবজির পাশাপাশি কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামে। ১২০-এ উঠে যাওয়া ডিমের ডজন এখন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আর ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। তবে খামারে ডিম ও মুরগির দাম অনেক কম।
এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-৫০০ টাকায়। নলা (ছোট রুই) মাছ ১৬০-১৮০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া ১৩০-১৭০ টাকা, পাঙাশ ১৪০-১৮০ টাকা, শিং ৩০০-৪৫০ টাকা, শোল মাছ ৪০০-৭৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০-৬০০ টাকা, বোয়াল ৫০০-৮০০ টাকা, টেংরা ৪৫০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আগ্রাবাদের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বাংলাধারাকে বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে এখন সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম বাড়ায় আরও আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে এখন চাল ও ডালের যে দাম, তা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। সংশ্লিষ্টদের উচিত চাল ও ডালের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। যারা এই সময়ে দাম বাড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা করতে পারলে দেখবেন সবকিছুর দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













