২৯ অক্টোবর ২০২৫

করোনা আতঙ্কের মাঝেও ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের গুজব

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

বিশ্ব আতঙ্ক করোনা মহামারির ভয়ে দেশব্যাপী লকডাউন অবস্থা বিরাজ করছে। দেশের অন্য জেলার মতো পর্যটন নগরী কক্সবাজারেও জারি করা হয়েছে লকডাউন। শহর থেকে গ্রামে বা এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় যাওয়াও যখন দুরূহ হয়ে পড়েছে, ঠিক সে সময়ে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রচার পাচ্ছে। এরা করোনা ভাইরাস নিয়েই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে প্রচার পাওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে আতংক বিরাজ করছে।

সীমান্ত এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে এবং মসজিদের মাইকে বিষয়টি প্রচার করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানালেও অনেকে খবরটি ‘গুজব’ বলে মন্তব্য করছেন। এরপরও খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সূত্রমতে, বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দিনগত রাত ৯টা পর থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় করোনার ভাইরাস বহনকরা শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশায় সীমান্তে অবস্থান করার খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সারারাত স্থানীয় জনগণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সময় পার করে। কঠোর অবস্থান নেয় সীমান্ত প্রহরী বিজিবি। সাথে পাড়া-মহল্লায় মাইকিং করে রোহিঙ্গা প্রবেশ রোধে সতর্ক থাকতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।

অসমর্থিত একটি সূত্র মতে, অতীত সময়ের মতো শাহপরীরদ্বীপ সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার ভোররাতে রোহিঙ্গাদের একটা দল ঢুকেছে। তবে, বিষয়টি প্রশাসনের কেউ সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।

উখিয়া সীমান্তের পালংখালী ইউপির ৯নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সুলতান আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে খবর পায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ চেষ্টা চালাতে পারে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকেও আমাদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর আমি নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সতর্ক থাকতে আমার এলাকায় বেশ কয়েকটি মসজিদের মাইকিংও করা হয়।

সীমান্ত গ্রাম আন্জুমানপাড়ার বাসিন্দা আলী আহমদ জানান, রাতে হঠাত এলাকার মাইকে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা প্রতিহতে সবাইকে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করে প্রচারণা চালানো হয়। এতে স্থানীয়রা নিজ নিজ অবস্থান থেকে পাহারা বসায়। ২০১৭ সালে আমরাই নিপীগিত রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পারে সহযোগিতা দিয়ে মানবিক আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু এখন করোনাময় আতংক চলছে। এ সময়ে পাড়া-প্রতিবেশীও নিরাপদ নয় বলে সরকারের তরফ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তাই বিদেশীকে আশ্রয় দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, খবর পায় আঞ্জুমানপাড়ার মেদির খাল সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা অপেক্ষা করছে। খবর এসেছে, অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারীদের মাঝে অনেকে করোনা আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্যই তারা এপারে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের সাথে কথা হয়েছে। তাদের পাশাপাশি আমরাও সর্তক অবস্থানে রয়েছি।

পালংখালীর বাসিন্দা শাহদত হোসেন বলেন, করোনা আতংকের এই সময়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না হওয়ায় বাঞ্চনীয়। কারণ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিবৃতিতে মিয়ানমারে মাত্র ২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সনাক্তের কথা বলা হয়েছিল। সেখানে শতাধিক করোনা আক্রান্ত রোহিঙ্গার সীমান্তে অবস্থান বা অনুপ্রবেশ চেষ্টা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আতংক ও গুজব ছড়ানোয় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির কমান্ডার লে. কর্ণেল আলী হায়দার আজাদ জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ খবর পায় সীমান্তে শতাধিক রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। এটি জানার পরই সীমান্তে টহল জোরদার করার পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সজাগ করা হয়। শুক্রবারও পুরো সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। কোথাও এদের অস্থিত্ব পাওয়া না গেলেও সতর্ক থাকা হচ্ছে। কোন ব্যক্তিকে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে না। টেকনাফের সাথেও আমার কথা হয়েছে। তারাও একই ভাবে সতর্ক রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে খবরটি পাওয়ার পর তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উখিয়া-টেকনাফের ইউএনওকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন দু’ইউএনও। এরপরও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ডিসি।

মিয়ানমারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে আলজাজিরা ২৪ মার্চ জানায়, মিয়ানমারে দুজনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। আক্রান্ত দুই নাগরিকের একজন যুক্তরাষ্ট্র এবং অপরজন যুক্তরাজ্য ফেরত। যাদের বয়স যথাক্রমে ৩৬ বছর এবং ২৬ বছর। আক্রান্ত দুই ব্যক্তির সঙ্গে কারা কারা সংস্পর্শে এসেছেন তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এরপর আর কোন রোগী সনাক্তের খবর আসেনি।

এদিকে, ডিসেম্বরের শেষে চীন থেকে কভিড-১৯ এর উৎপত্তি। দেশটির সঙ্গে মিয়ানমারের বিশাল সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ১৬০টিরও বেশি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে গেলেও সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমার কোনো ধরনের আক্রান্তের খবর জানায়নি। এরপরও বৃহস্পতিবার করোনা আক্রান্ত শতাধিক রোহিঙ্গা সীমান্তে অবস্থান নেয়ার খবরে সীমান্তজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। যদিও, এ খবরকে একটি নিছক ‘গুজব’ মন্তব্য করেছেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন