কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজার সদরের ১নং ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল কালাম সরকারি ত্রাণ নিয়ে রাজনীতি করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি বিতরণ করা সরকারি ত্রাণগুলো ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেয়া সহযোগিতা বলে প্রচার করে আওয়ামীলীগ নেতা মেম্বারের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউকে এক পুটলা ত্রাণও দেননি তিনি। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও ওয়ার্ডের লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতি মুহাম্মদ ইদ্রিস অভিযোগ করে বলেন, গত ১১এপ্রিল ইসলামপুর ইউনিয়ের ১ হাজার মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবুল কালাম। সেসময় তিনি প্রচার করেন, এসব ত্রাণ তার ব্যাক্তিগত ও বিএনপির তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে।
ত্রাণসামগ্রীতে ছিল ১০ কেজি চাল, ২ কেজি পেয়াজ, ১কেজি ডাল, ১কেজি তেল, ১ কেজি লবণ,ও ১পিচ সাবান।
বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের বিষয়টি প্রচার হয়। সেখানেও ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে এসব ত্রাণ দেয়া হয় বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান আবুল কালাম। এরপর থেকে বিএনপির প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবুল কালামকে মানবিক উল্লেখ করে অভিনন্দনে ভাসান সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহসরকারিরা।
মেম্বার ইদ্রিস দাবি করেন, তিনি (ইদ্রিস) ওয়ার্ড মেম্বার ও আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ায় ইউনিয়ন ও জেলা বিএনপির সদস্য ও চেয়ারম্যান আবুল কালাম তার এলাকায় কোন ত্রাণ বিতরণ করেননি। অথচ এ ওয়ার্ডের শতকরা ৮০ জন লোক গরীব ও শ্রমজীবী। সেদিনের ত্রাণ না পাওয়ায়, হতদরিদ্র ওয়ার্ডবাসির জন্য সরকারি ত্রাণের তদবির করতে গিয়ে জানতে পারি ওইদিন বিতরণ হওয়া ত্রাণ সরকারি জরুরি সহায়তা।বিষয়টি লিখিত ভাবে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানাতে চাইলেও তিনি লিখিত অভিযোগ না নেয়ায় মৌখিকভাবে জানিয়ে আসা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ইদ্রিস আরো বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে আমরা মেম্বার-চেয়ারম্যানের দ্বন্ধ ব্যক্তিগত। সে দ্বন্ধের কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে এলাকার সাধারণ মানুষকে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত করার অধিকার তো চেয়ারম্যানের নেই। সরকারি ত্রাণ থেকে একটি ওয়ার্ডকে এভাবে বঞ্চিত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ, প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান, আর বিএনপির এ নেতা তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে আওয়ামীলীগের বদনাম রটাতে চান। বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানানোর উদ্যোগ নিচ্ছি।
এসব বিষয় উল্লেখ করে মেম্বার ইদ্রিস রানা ফেসবুকে তার নামে থাকা একাউন্টে দুটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেন আ’লীগ নেতা হওয়ায় তার ওয়ার্ডে সরকারি ত্রাণ সহায়তা দেননি চেয়ারম্যান। কর্মহীন হয়ে পড়া এলাকার অনেক মানুষ ত্রাণ সহায়তা না পেয়ে দুর্ভোগে দিনযাপন করছে। এটা তাকে চরম কষ্ট দিচ্ছে, কলিজাটা বের হবার উপক্রম হচ্ছে। এ ছাড়াও বকেয়া বেতন দাবি করায় চেয়ারম্যান তার উপর খেপেছেন বলে জানান ইদ্রিস।
অপরদিকে, চেয়ারম্যানের দেয়া ত্রাণ ব্যক্তিগত প্রচার পাওয়ায় স্থানীয়রা সরকারি ত্রাণের আশায় প্রতিদিন মেম্বারের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। তাদের দাবি, চেয়ারম্যান নিজের ব্যাক্তিগত তহবিল উল্লেখ করে দেয়া ত্রাণ তার আত্মীয়স্বজন ও বিএপির নেতাকর্মীদের দিয়েছেন। এসব আবার অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে প্রচারও করছে। এ চরম মুহূর্তে ত্রাণ না পাওয়ায় অনেকে সরকারের দায়িত্বশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এনজিও থেকে সহযোগিতা দেয়ার খবর পেয়ে সদর ইউএনও’র সাথে পরামর্শ করেই এবার ত্রাণ দেয়া হয়নি। সরকারি ত্রাণ বিতরণ করেছেন ট্যাগ অফিসার আর একইদিন আমি দলীয় এবং নিজ তহবিলেরটা দিয়েছি। চেয়ারম্যানের মতে, মেম্বারের মাধ্যমে ত্রাণ দিলে তা তিনি নিজের মাঝে রেখেদেন। তাই আমি নিজেই সেখানে ত্রাণ বিতরণ করি। দুজন দুই দলের জনপ্রতিনিধি হওয়ায় বিতর্কটা লেগে থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মেম্বার ইদ্রিস রানার ওয়ার্ডে ত্রাণ দেয়া হয়নি এমনটি স্বীকার করে কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেছেন, মঙ্গলবার ইদ্রীস রানা আমার কার্যালয়ে এসেছিলেন। তার বক্তব্য শুনার পর আগামীতে ইদ্রিসের ওয়ার্ডে ত্রাণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ফেরানো হয়েছে।
সরকারি ত্রাণ নিয়ে আবুল কালামের ব্যাক্তিগত প্রচারের বিষয় জানতে চাইলে ইউনও বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে গত ১১ এপ্রিল যেসব চাল বিতরণ করা হয়েছে সবই সরকারি সহযোগিতা, চেয়ারম্যানের নয়। সেখানে ট্যাগ অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যানের ব্যাক্তিগত ত্রাণ দাবি করে প্রচারিত নিউজ এবং একটি ওয়ার্ডে ত্রাণ না পাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ














