তারেক মাহমুদ »
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস নিস্তব্ধ ও অচল দিয়েছে গোটা বিশ্ব। তারই ছোঁয়ায় আজ আতঙ্কে গৃহবন্দি বাংলাদেশের মানুষ। ইট পাথরের শহরের বৃহদাকার রাস্তাগুলো আজ যান ও জনশূন্য। সবকিছুই যেন প্রাণহীন। বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া মরণঘাতি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের দায়িত্বশীল কর্ম তৎপরতায় উপজেলার সর্বমহলে প্রশংসিত হয়ে উঠেছেন।
এ ভাইরাস সংক্রমণ রোধ ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা সৃষ্টি, প্রবাস ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের কৃত্রিম সংকট ও ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছুদিন ধরে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অভিযান অব্যাহত রাখছেন তিনি।
এ ছাড়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং হোম কোয়ারেন্টাইন আইন অমান্যকারী বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের জরিমানা এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিকারি দোকানদার, কোচিং সেন্টারের মালিক ও বিদেশ ফেরত বক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইন আইন না মানার অভিযোগে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অর্থদণ্ডে দন্ডিত করেন এ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এ সময় তিনি বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের যত্রতত্র জায়গায় ঘোরাফেরা না করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি না করার কঠোর নিদের্শনা দেন।
হাটহাজারীর বিভিন্ন বাজারের চা দোকানে জনসমাগম এড়াতে চা দোকানের টিভি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিম্মায় রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাটহাজারী উপজেলার অসহায়, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, ট্রাক চালক, দুই ত্রিপুরা পল্লীর মানুষ, জেলে পাড়া ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের হাতে ত্রাণ ভর্তি ‘ভালবাসার থলে’ তুলে দেন তিনি।
সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হাটহাজারীর খোলা মাঠে বাজার বসানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি। জনসমাগম এড়াতে কখনও মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে, আবার কখনও নিজ দায়িত্বে মানুষের বাড়ির দরজায় গিয়ে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন তিনি।
করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন মানুষের খাদ্য সমস্যায় সহায়তা হিসেবে হাটহাজারীবাসীকে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ছয় কিস্তিতে চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের বিষয়ে জনগণ ও সরকারের মধ্যে যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয় সেজন্য শুদ্ধাচারের অংশ হিসেবে জনগণের নিকট সঠিক জবাবদিহিতা বজায় রেখেছেন তিনি।
করোনা নিয়ে এত ব্যস্ততার মধ্যেও হালদার প্রতি লক্ষ্য রাখতে মোটেও ভুলে যান নি তিনি। দিন-রাত এক করে হালদা পাড়ে চালাচ্ছেন নিয়মিত অভিযান। আটক করছেন অবৈধ জাল।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বাংলাধারাকে বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই আতংকিত। হাটহাজারী উপজেলা ও পৌরসভাসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ভ্যানচালক, রিক্সাচালক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মানুষ, ভিক্ষুক, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, এই সংকটময় সময়ে হাটহাজারীর বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব, উদ্যোক্তা এবং গ্রাম পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। ত্রাণের তালিকা প্রস্তুত, বিতরণ, হোম কোয়ারান্টাইন নিশ্চিতকরণ সহ সকল কাজে আমি সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। তারা সকলেই রাত-দিন কাজ করে চলেছেন।
তিনি আরও বলেন, হাটহাজারীবাসীকে ভাল রাখতে, নিরাপদে রাখতে আমার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। তবে হাটহাজারীবাসী যদি আমাদের সহযোগিতা না করেন তাহলে সব চেষ্টা, কাজ বৃথা হয়ে যাবে। পাশাপাশি সকল ধরণের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সামনে রমজান। সেদিকেও আমার নজর আছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।
সংকটময় এ মুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা দরকার। করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে বাড়িতে অবস্থান করারও অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













