বাংলাধারা প্রতিবেদন »
মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে চলছে সাধারণ ছুটি আর লকডাউন। আর এই অসময়ে কর্মহীন হয়ে চরম বিপাকে হাঁসফাঁস অবস্থা খেটে খাওয়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। এই জনগোষ্ঠীর সহায়তায় মাঠে নেমেছে দেশের অকুতোভয়ী সেনা সদস্যরা। নিজের জীবনের পরোয়া না করে খাদ্য সহায়তা নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছুটছে তাঁরা।
লকডাউনের শুরুতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ করোনা মোকাবেলার এই সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমরা সৈনিক, আমরা সব সময় যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং সেই প্রস্তুতি নিয়ে আমরা আছি। সবাইকে সহযোগিতা করবো।’ তার এই বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটছে সেনাবাহিনীর যাবতীয় কার্যক্রমে। মানুষকে করোনার বিষয়ে সচেতন করা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, জীবাণুনাশক কার্যক্রম পরিচালনা ও লকডাউন কার্যকরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে সেনাবাহিনী।
সংকটময় এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে, আঁধার কাটাতে অতি দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। এগিয়ে আসছে সামাজিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। চরম অভাবের জীবনে নিম্নবিত্তের কাছে কাঙ্ক্ষিত ত্রাণই যেন আবির্ভূত হচ্ছে ত্রাতা রূপে। কিন্তু বেশ কিছু স্থানে ত্রাণ বিতরণ হলেই পরোয়া করা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বের রীতি-নীতির। খাদ্য সঙ্কটে কোথাও কোথাও বেঁধেছে লড়াই। কঠিন এমন বাস্তবতায় কেবলমাত্র সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে পারেনি সরকারের নির্দেশে দেশজুড়ে মাঠে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
কোন জনসমাগম নয়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গৃহবন্দী জীবন যাপনের শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াটাই এখন সেনাবাহিনীর ‘রুটিন ওয়ার্ক’। অদৃশ্য জীবাণু করোনার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কার্যত এ যুদ্ধের পাশাপাশি মানবতার পক্ষের লড়াইয়েও নিজেদের অবতীর্ণ করেছেন দেশপ্রেমিক সেনারা। মানবিকতা বোধে জাগ্রত হয়ে দেশের ৬২ টি জেলাতেই কর্মহীন গরিব ও দুস্থদের বাঁচিয়ে রাখতে নিত্য পণ্য বিতরণের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। হুড়োহুড়ি বা শোডাউন প্রবণতার বাইরে গিয়ে তারা গরিব ও দুস্থদের ত্রাণের প্যাকেট পৌঁছে দিচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। কোথাও কোথাও আবার নীরবে-নিভৃতে; ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতে।
কখনও কখনও আবার টহলের গাড়িতে থাকা ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেয়া হচ্ছে ক্ষুধার জ্বালায় বাহিরে বের হয়ে আসা মানুষের হাতে। এ বিষয়ে যাবতীয় অর্থায়ন হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব উদ্যোগে; নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত রেশনের টাকায়। উদ্ভূত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে থাকার সরকারি উদ্যোগে নিজেদের সহযাত্রী হিসেবে মানবিক নৈতিকতার মনোভাব নিয়ে পথচলার অঙ্গীকার করেছেন দেশপ্রেমিক অকুতোভয় সেনারা।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত কোন কোন এলাকায় ত্রাণ বা খাদ্য সহযোগিতা পৌঁছায়নি সে বিষয়ে খোঁজখবর ও তথ্য সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টার (ইবিআরসি), ২৪ পদাতিক ডিভিশন।
তারই আলোকে রোববার (১৯ এপ্রিল) থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী নিজেরাই পৌঁছে দিয়েছেন।
আজ সোমবার (২০ এপ্রিল) সকাল থেকে আবারও ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা। এতে প্রত্যেক পরিবারের অন্তত ১৫- ২০ দিনের খাবারের চাহিদা পূরণ হবে বলে জানান মেজর আবু সায়েদ।
মেজর আবু সাঈদ বলেন, ‘অভাবগ্রস্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনীর আর্মি ট্রেনিং অ্যন্ড ডকট্রিন কমান্ড। পর্যায়ক্রমে জেলার অন্যান্য এলাকাগুলোতেও এই খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।’
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













