২৯ অক্টোবর ২০২৫

করোনাকালে নীরবেই অতিবাহিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৩ তম জন্মদিবস

বাংলাধারা প্রতিবেদন »  

‘সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর’। ‘কান্ট্রি মুভস উইথ আস’। উভয় প্রতিপাদ্য স্লোগান ধারণ ও লালন করে সুদীর্ঘ প্রাতিষ্ঠানিক পথ পরিক্রমায় দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ১৩৩তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী আজ। প্রতিবছর এ উপলক্ষে একাধিক দিনব্যাপী জমকালো আয়োজন থাকলেও এবার করোনা মহাদুর্যোগ পরিস্থিতির বাস্তবতায় নীরবেই অতিবাহিত হচ্ছে বন্দরের জন্মদিবস।

বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এক কঠিন সময় অতিবাহিত করছে। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়েও চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণ দেশের সাপ্লাই চেন নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে ‘২৪ ঘণ্টা ৭ দিন’ কাজ করে যাচ্ছেন।

আমদানি পণ্য ডেলিভারি সীমিত হওয়ার কারণে বন্দরে সাময়িক কনটেইনার জট ও জাহাজ জট সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনা সঙ্কটকাল কেটে গেলে আমরা পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে মুজিববর্ষের বিশেষ আঙিকে বন্দর দিবস উদযাপনের উদ্যেগ নেবো ইনশাআল্লাহ। জাতীয় স্বার্থে বন্দর সার্বক্ষণিক সচল আছে। কন্টেইনারজট হ্রাসে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিরাপদ, ভূ-প্রাকৃতিক ও কৌশলগত সুবিধাজনক পোতাশ্রয় এ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন। ১৮৮৭ সালে ব্রিটিশ শাসনকালে পোর্ট কমিশনার্স অ্যাক্ট প্রণয়ন, ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে কার্যকরী করার মধ্যদিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সূচনা।

আধুনিক শিপিং বিশ্বে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক কন্টেইনার সমুদ্রবন্দর। দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রফতানি তথা বৈদেশিক বাণিজ্য সামাল দিচ্ছে। প্রধান সমুদ্রবন্দর তথা কাস্টম হাউসের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ এবং অন্যান্য রাজস্ব, করসহ পরোক্ষভাবে সরকারের রাজস্ব জোগান আসছে বার্ষিক প্রায় পৌনে এক লাখ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর প্রতিবছরই মুনাফা অর্জনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়। বন্দরের অর্থায়নে নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ ছাড়াও পায়রা বন্দর এবং মহেশখালীর মাতারবাড়ী-ধলঘাট গভীর সমুদ্রবন্দর মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

১৯৭৬ সালে একটি সাধারণ জাহাজে মাত্র ছয়টি কন্টেইনার দিয়ে যাত্রা শুরু করে গেল বছর চট্টগ্রাম বন্দর ৩১ লাখ ইউনিট আমদানি-রফতানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। সগৌরবে স্থান পেয়েছে ‘লয়েডস লিস্ট’-এর ২০১৯ সালের বিশ্বসেরা কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে পারদর্শী একশ’টি সমুদ্রবন্দরের কাতারে।

চট্টগ্রাম বন্দর ৬ ধাপ এগিয়ে উন্নীত হয়েছে ৬৪তম অবস্থানে। ২০১৮ সালে ছিল ৭০তম, ২০০৮ সালে ছিল ৯৫তম স্থানে।

বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের এ অর্জন বর্তমান সরকারের চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন। জাতীয় অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বন্দর পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।

তাছাড়া একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বন্দরের আধুনিকায়ন, যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বে-টার্মিনাল, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণ ও নিউমুরিং ওভার ফ্লো ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

করোনা সঙ্কটে সর্বশেষ জট পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, বর্তমানে সবক’টি ইয়ার্ডে ৪৭ হাজার ৪৩৯ ইউনিট কন্টেইনার রয়েছে। স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ ইউনিট। যা গত ২৪ ঘণ্টায় কিছুটা কমেছে। এ সময়ে ২ হাজার ৯৮৮ কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। আমদানি উঠানামা হয়েছে ৫৫৮৪ কন্টেইনার। ৮টি জাহাজ জেটিতে আমদানি কন্টেইনার খালাস করছে। বহির্নোঙরে জটে অপেক্ষা করছে আরও ৩২ জাহাজ। জেটিতে সাধারণ পণ্যবাহী ৭টি জাহাজে খালাস কাজ চলছে। ১৯টি আইসিডিতে (অফডক) আসদানি পণ্য যাচ্ছে। ক্রমশ বন্দরজট কমে আসছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন্দরকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সর্বাত্মক সহায়তার জন্য বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, বার্থ অপারেটর, টার্মিনাল অপারেটর, শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার, বিকডা, শিপিং এজেন্ট, শ্রমিক, বন্দর ব্যবহারকারী ও স্টেকহোল্ডারদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।

এক শুভেচ্ছা বার্তায় রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিকালীন সময়েও চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকগণ দেশের সাপ্লাই চেইন নির্বিঘ্ন রাখার স্বার্থে ২৪/৭ কাজ করে যাচ্ছেন। আমদানিকৃত মালামাল ডেলিভারী সীমিত হওয়ার কারণে বন্দরে সাময়িক কন্টেইনার জট ও জাহাজ জট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও  সচিব  মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আমদানি কন্টেইনার অফডকে প্রেরণের সিদ্ধান্ত বন্দরকে আবার সচল করেছে।

তিনি বলেন, আমদানিকারকগণ দ্রুততম সময়ে তাদের আমদানিকৃত পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরকে করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতেও সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। এর ফলে বর্হিবিশ্বে দেশের ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন