২৯ অক্টোবর ২০২৫

দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফিরোজের উত্থানের পেছনে নাটের গুরু কারা?

ইয়াসির রাফা »

চট্টগ্রাম নগরীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মো: ফিরোজকে ইয়াবা ও গুলিসহ আটক করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। শুক্রবার (১ মে ) রাত দেড়টার হত্যা, ডাকাতি, অস্ত্রসহ একাধিক মামলার এ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়। শিবির ক্যাডার সাজ্জাদের অনুসারী হলেও কৌশলগত ভাবে ভোল পাল্টে এখন স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা দাবি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল এই ফিরোজ।

প্রশ্ন আসতে পারে কাদের ছত্রছায়ায় শিবির ক্যাডার ফিরোজের মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা ভোল পাল্টে নিজেকে যুবলীগ নেতা দাবি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল এতদিন! সে প্রশ্নের জবাব ইতোমধ্যে পুলিশ বের করার প্রক্রিয়া করছে । তবে অনুসন্ধান করে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে নিজেকে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের ছবিসহ নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ব্যানারও টাঙিয়েছিল ফিরোজ।

২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নগরের প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে ১১ লাখ টাকা লুট করে ফিরোজ। ডাকাতি ঘটনার পরদিন নগরের বায়েজিদ থানার কয়লাঘর এলাকা থেকে শিবির ক্যাডার মো. ফিরোজ ও মনিরুজ্জামানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তিতে ২০১৫ সালে ফিরোজ জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার শুরু করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম। সে সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের ছবি ব্যবহার করে বিলবোর্ড টাঙিয়ে সমালোচনায় এসেছিলেন ফিরোজ। তারপর হঠাৎ’ই রাতারাতি বনে যান নগর যুবলীগ নেতা। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যাশী দিদারুল আলমের হাত ধরেই ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে আ জ ম নাছিরের সাথে ।

পুলিশ বলছে, যুবলীগ পরিচয় দিয়ে ফিরোজসহ সাজ্জাদের একাধিক সহযোগী নগর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কখনও প্রকাশ্যে, আবার কখনো গা ঢাকা দিয়ে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা। পুলিশ আরো জানায়, সব ধরনের অপরাধকর্মে নিজেকে যুবলীগ নেতা মেয়রের অনুসারী পরিচয় দিলেও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ, সরওয়ার ও ম্যাক্সনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত ফিরোজ।

সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে আলোচিত নগরের শানশাইন গ্রামার স্কুলের ছাত্রীতাসফিয়া হত্যা মামলার আসামী ফিরোজ। নগরের মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, ষোলশহর ও পাঁচলাইশ এলাকায় কয়েকটি গ্যাং পরিচালনা করে ফিরোজ। অর্ধশতাধিক কিশোর ও তরুণ সক্রিয় রয়েছে এসব গ্রুপে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের আলোচিত তাসফিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় জেলেও যান দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ফিরোজ, জানায় পুলিশ।

বায়োজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, ‘ফিরোজ নামে একজনকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে শিবিরের সন্ত্রাসী সাজ্জাদের অন্যতম সহযোগী। সাজ্জাদের অন্য দুই সহযোগী ইকবাল, একরাম ও অক্সিজেনের মামুনের সাথে মিলে চট্টগ্রামে সাজ্জাদের সব অপকর্মের নেতৃত্ব দেয় ফিরোজ। সম্প্রতি পাঁচলাইশ থানা এলাকায় চাঁদার দাবিতে যে বোমা মারার ঘটনা ঘটেছে সেখানে ইকবালও ছিল। তিনদিন আগেও ইকবাল ফিরোজের বাসায় ছিল। আমরা ইকবালকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের এই সহযোগীকে নিয়মিতভাবে মেয়র নাছিরের আশেপাশে দেখা গেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়র নাছিরের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচিতে একত্রে ছবি ও স্টেস্টাস প্রাদনের মাধ্যমে ফিরোজকে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছে প্রতিনিয়তই ।

এছাড়া মহানগর যুবলীগের আরেক সদস্য জাবেদুল আলমের সাথেও ফিরোজের ঘনিষ্ঠতা দেখা গেছে। মূলত এই দুজনের সহযোগিতায় নিজেকে ‘যুবলীগ নেতা’ পরিচয় দিয়ে আসছে ফিরোজ।

এই বিষয়ে ওসি প্রিটন সরকার বলেন, ‘এটাই তো করে আসছে তারা। শুধু ফিরোজ না, ইকবাল একরামরাও তো নিজেদের যুবলীগ নেতা বলে পরিচয় দেয় এখন।’

উল্লেখ্য, ফিরোজ কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান ওসি প্রিটন সরকার।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন