২৬ অক্টোবর ২০২৫

সচেতনতা স্বকীয় প্রবৃত্তি, একে আরোপ করা যায় না

এস এম ইকরাম হোসাইন »

বরং আমি এই লকডাউন শিথিল করাকে পজিটিভলিই দেখছি। কেন? -সুইডেনের দিকে তাকালেই এর উত্তর মিলে; যখন তামাম বিশ্ব হেঁটেছে লকডাউনের পথে সুইডেন বেছে নিয়েছে ভিন্ন পথ! সব মোটামুটি স্বাভাবিক রেখেই ‘হার্ড ইম্যুনিটি’র আত্মঘাতী প্ল্যান নিয়ে তারা করোনার বিরুদ্ধে লড়েছে, অবশ্য এটা পুরোপুরি দেশের জনগণের সমর্থনেই সম্ভব হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে বিশ্বমিডিয়া সুইডেনের রাজতান্ত্রিক সরকার কিংবা স্বাস্থ্য গবেষকদের কম উপহাস করেনি; কিন্তু এখন পর্যন্ত সুইডেনের করোনা পরিস্থিতি অন্যান্য দেশের চাইতেও অনেক ভালো।

এই ভিন্নপথে হেঁটে সুইডেন একটি বার্তাটাই দিতে চেয়েছে- সচেতনতা নিজের মাঝেই থাকতে হয়, আরোপ করা যায় না।

তাকান ভিয়েতনামের দিকে, বাংলাদেশের চেয়েও তুলনামূলক খুবই দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকা এই রাষ্ট্র লকডাউন তুলেছে গত ২২ এপ্রিল, কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৭১, সুস্থ ২৩২ ও মৃত্যু ০ (শূন্য) ।

জার্মানীর কথা জানেন? -আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষ পার হওয়ার পরও এঞ্জেলা ম্যার্কেলের সরকার রীতিমতো দুঃসাহস দেখিয়েছে লকডাউন তুলে! এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য গবেষকগণ রে রে করে উঠলো, দাবি জানালো এইবারা করোনা ‘সেকেন্ড ওয়েব’ হানা দিবে জার্মানে; নিস্তার নেই! কিন্তু বাস্তবিক চিত্র রূপ নিলো বিপরীতে, হঠাৎ করে করোনা সূচক ডাউন হতে লাগলো জার্মানে, ইম্যুনিটি গ্রো হতে লাগলো মানুষের!

এবার আসি বাংলাদেশের দিকে, এইতো কদিন আগেই দেশে সোর উঠেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যতো উদ্ভট কর্মকান্ড আর হঠাৎ পোশাক শ্রমিকদের ঢাকা- চট্টগ্রামমুখী জনজোয়ার নিয়ে! আমরা সকলেই সমালোচনা করেছি, আতংকিত হয়ে ভেবেছি এই বুঝি ‘র‍্যাপিড মাস ট্রান্সমিশন’ শুরু হলো, কিন্তু বাস্তবতা বলছে দৃশ্যমান করোনা সংক্রমণের গতি সে তুলনায় এখনো স্লো বটে। শুধু তাই নয়, আমার দৃঢ় বিশ্বাস এখনই যদি দেশের প্রতিটি মানুষকে গড়পড়তায় মাস স্ক্রিনিং করা হয়, নির্দ্বিধায় বলতে পারি করোনা আক্রান্তের সংখ্য লাখের চেয়েও কম হবেনা; হালকা উপসর্গ দেখা দিলেও অনেকেই আইসোলেশন কিংবা সামাজিক উৎপীড়নের ভয়ে টেস্টের দিকে পা বাড়ায়নি। এটা হলফ করে বলা যায়, আবার অনেকেই উপসর্গহীন আক্রান্ত হয়ে নিজস্ব অনাক্রম্যতা (সেল্ফ ইম্যুনিটি) দিয়ে যুদ্ধ করে সুস্থ হয়ে গিয়েছে হয়তো তারাও জানেনা।

সত্য বলতে কি বাংলাদেশের মতো একটা রাষ্ট্রে এতো এতো প্রণোদনা, হুট করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে এতো বাজেট এটি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। চোরের দলের ভোগে গেলেও, সাবাড় কিন্তু করতে দেয়নি প্রশাসন, এতেই হাজার আলোচনা- সমালোচনার পরও সরকার একটা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

লকডাউন শিথিল করায় আমাদের হা-হুতাশ করাটা খুব স্বাভাবিক, কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন আমরা নিজেরাই এই লকডাউন মেনছি যথাযথভাবে? নয়তো এতো সিকিউরিটি, এতো লকডাউনের মাঝেও আজ দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্য দশ হাজার ছাড়ালো কিভাবে? কিংবা আদৌ কি কোন কার্যকর লকডাউন সম্ভব? স্বাস্থ্য কর্মী, প্রশাসন, ব্যাংক স্টাফ ও অন্যান্য জরুরী কাজে নিয়োজিত কর্মীরা তো শুরু থেকেই মাঠে, দেশের জনগোষ্ঠীর একটা অংশকে মাঠে ছেড়ে দিয়ে লকডাউন কি আদৌ সম্ভব? দিনশেষে তো তারাও পরিবারেই ফিরে, পারিপার্শ্বিক মানুষের সাথে মিশে! তাছাড়া একটি কার্যকর করোনা ভ্যাক্সিন না আসা পর্যন্ত লকডাউন রেখে দেশে যে আর্থিক মহামারী তৈরী হবে তা দেশকে পিছিয়ে নিয়ে যাবে অনেকদূর, ফল একা সরকার ভোগ করবেনা; করবো আমি আপনিও।

তাই সুইডেনের নীতিতেই বলি- সচেতনতা নিজের ভিতর থেকেই জাগান, এটি কেউ আপনাকে চাপিয়ে দিতে পারেনা। ঘরে বা বাইরে যেখানেই থাকুন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন; নিরাপদে থাকুন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন