বাংলাধারা প্রতিবেদন »
জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে পূর্বে কোনো ধরনের আগাম কর দিতে হতো না। কেবল প্রতি টনে ৩০০ টাকা হারে কর পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইনে এ শিল্পে জাহাজের মোট মূল্যের ৫ শতাংশ আগাম কর আরোপ করা হয়, যা আমদানির সময় পরিশোধ করতে হয়। এর প্রভাবে আগের তুলনায় কমেছে জাহাজ আমদানি। আসন্ন বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করনীতিতে আগাম করে অব্যাহতি চান এ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আগাম কর ফেরত দেয়ার বিধান থাকা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে একটি টাকাও ফেরত পাননি ব্যবসায়ীরা। ফলে ব্যবসায়ীদের মূলধন ঘাটতি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। চলতি অর্থবছরে এখনও পর্যন্ত সরকারের কাছে ২৩৮ কোটি টাকা ফেরত পাওয়ার কথা।
ব্যবসায়ীরা জানায়, চলমান করনীতিতে ৫ শতাংশ আগাম কর ধার্য্য করায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে এর আগের অর্থবছরগুলোতে জাহাজ আমদানির পরিমাণ ও সরকারকে রাজস্ব দেয়ার হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ছিল। নতুন নীতির কারণে সরকারের কোষাগারে অর্থ জমছে কম। জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় বেকার শ্রমিকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
নতুন রাজস্ব নীতিতে ৫ শতাংশ আগাম কর ধার্য করায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাহাজ আমদানির পরিমাণ ও সরকারকে রাজস্ব প্রদানের হার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ছিল।
২০১৫-২০১৬ সালে আমদানি করা ২৫০টি জাহাজ থেকে (এলডিটি-৩১.০৫) রাজস্ব প্রদান করা হয় ৮২২ কোটি টাকা, ২০১৬-২০১৭ সালে ১৮৮টি জাহাজ থেকে (এলডিটি-২৩.৮৬) রাজস্ব প্রদান ৬৩২ কোটি টাকা, ২০১৭-২০১৮ সালে ২০২টি জাহাজ থেকে (এলডিটি-২২.৪৯) রাজস্ব প্রদান ৫৯৬ কোটি টাকা, ২০১৮-২০১৯ সালে ২৭২টি জাহাজ থেকে (এলডিটি-২৯.৯১) রাজস্ব প্রদান ৭৯২ কোটি এবং ২০১৯-২০২০ সালে ১৩৮টি জাহাজ থেকে (এলডিটি-১৫.৬৮) রাজস্ব প্রদান করা হয় ৪৭৮ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে যেখানে ২৭২টি জাহাজ আমদানি করা হয় এবং সরকারকে মোট ৭৯২ কোটি টাকা রাজস্ব প্রদান করা হয়, সেখানে চলতি অর্থবছরে জাহাজ আমদানি কমে ১৩৮টিতে দাঁড়িয়েছে। যার রাজস্ব ৪৭৮ কোটি টাকা আগাম কর ও ভ্যাট হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়েছে। নতুন নীতির কারণে সরকারের কোষাগারে অর্থ জমছে কম। বিপরীতে আমদানিকারকরাও পুঁজিশূন্য হয়ে পড়ছেন। জাহাজ আমদানি কমে যাওয়ায় বেকার শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বিএসবিআরএর নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম রিংকু এ প্রসঙ্গে বলেন, করোনাভাইরাসজনিত অথনৈতিক মন্দা মোকাবেলা ও এ খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য আসন্ন বাজেটে সরকারের নীতি সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে । শিল্প মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে প্রস্তাব দিয়েছে । এখন এনবিআরের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে শিল্পটাকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন পুরনো জাহাজ আমদানি করে যা মোট পুরনো জাহাজের আমদানির ২৫ শতাংশের বেশি। এ শিল্পের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের কোষাগারে শুল্ক ও অন্য খাতে রাজস্ব হিসেবে জমা হয় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













