কাউছার আলম, পটিয়া »
পটিয়ায় একই পরিবারের ৯ জনসহ একদিনে ১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
একই পরিবারের ৯ জনের মধ্যে আরো ১জন সদস্য কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের বাসায় আইসোলেশনে আছেন। সেই পরিবারের আক্রান্ত লোক কয়েক দিন আগে পটিয়ার বাড়িতে পরিবার পরিজনদের দেখতে আসেন। বাড়ি থেকে যাওয়ার পরে তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
ধারনা করা হচ্ছে, তার থেকেই পরিবারের সবাই সংক্রমিত হয়েছেন। গত ৭ মে উক্ত পরিবারের সবার করোনা স্যাম্পল সংগ্রহ করে বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। আর কাল রাত সোমবার পরিবারটির সবার ৯ জনের করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। তাদের মধ্যে তিন মাসের একজন শিশুও রয়েছে বলে জানা গেছে।
তাদের বাড়ি পটিয়া পৌর সদরের ৯নং ওয়ার্ডের গোবিন্দরখীল এলাকার কামাল কোম্পানীর বাড়িতে। আক্রান্ত ৯ জনের বয়স যথাক্রমে ৩৬ বছর, ৬২ বছর, ৩৬ বছর, ২৪ বছর, ২২ বছর, ৪মাস, ১১ বছর, ৩ মাস, ৪২ বছর।
আজ মঙ্গলবার (১২ মে) সকালে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন পৌরসভার ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডটি সম্পূর্ণ লকডাউনের আওতায় নিয়ে এসেছে।
এছাড়া একই দিন সোমবার বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষার পর পটিয়ায় আরও দুইজনের করোনা শনাক্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি পটিয়া পৌর সদরের ১নং ওয়ার্ডের কাগজীপাড়া এলাকার ৪৫ বছর বয়সী মহিলা। সে পটিয়ায় শনাক্ত হওয়া ২য় করোনা রোগীর ভাবি। যদিও সে পরিবারের আরো একজন পুরুষেরও করোনা পজিটিভ আসে। তিনিও হোম আইসোলেশনে আছেন।
এই পরিবারের এ পর্যন্ত মোট তিনজন সদস্যের করোনা পজিটিভ আসে। এরমধ্যে একজন সুস্থ হয়েছেন। অন্যরা বাড়িতে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের পরিবারের আক্রান্ত মহিলাটির নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৭ মে, পজিটিভ আসে ১১ মে রাতে। ইতোমধ্যে তারা পূর্বে থেকেই লকডাউনের আওতায় আছে।
অপরদিকে, সনাক্ত হওয়া আরো দুই জনের মধ্যে ৪৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ অসুস্থ হয়ে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৩ মে। গত ৬ মে হাসপাতাল হতে তারও নমুনা সংগ্রহ করে চমেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়। ১১মে বিকেলে তারও পজিটিভ আসে। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক তার শারীরিক কন্ডিশন ভালো থাকাতে তাকে পরামর্শ দিয়ে হোম আইসোলেশনে থাকার জন্য ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। সে উপজেলার দক্ষিণ ভুর্ষি ইউনিয়নের ৬নং ওয়াডের কেচিয়া এলাকার হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা। গতকাল রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান তার বাড়িটি লকডাউন করেছে।
অন্যদিকে ৪৫ বছর বয়সী আরো একজন উপজেলার পৌরসদরের ৮নং ওয়ার্ডের গোবিন্দরখীল এলাকার পজিটিভ আসে। সেও হোম আইসোলেশনে আছেন। তার এলাকার চারটি বাড়ি লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। তার ও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ মে। পজিটিভ আসে ১১ মে রাতে।
একদিনে ১২ জনের করোনা পজিটিভ হওয়ার পর গতকাল রাত ১ টা ২০ মিনিটে উপজেলা প্রশাসনের পেইজে লাইভে এসে পটিয়াবাসীকে দিক নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা। যা সাত মিনিটের মতো স্থায়ী ছিল। এ ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ২৫ হজারেরও বেশি ভিউ হয়েছে।
এসময় অনেকে পুরো পটিয়াকে লকডাউনের আওতায় কখন আনা হবে প্রশ্ন করা হয়েছে। আবার অনেকেই সাধুবাদের ফুলজুড়ি দিয়ে অভিবাদন দিতে দেখা গেছে। এসময় তিনি উপজেলার সকলকে সাথে নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে মোকাবিলা করে করোনা যুদ্ধে জয়ী হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা জানান, আক্রান্ত পরিবারগুলো লকডাউনের আওতায় রয়েছে। নতুন করে যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে আইসোলেশনে পাঠানো হচ্ছে। তিনি করোনায় আতঙ্কিত না হয়ে পটিয়ার মানুষকে সচেতন হওয়ার ও ঘরে থাকার আহ্বান জানান। বেশ কিছু এলাকায় করোনা সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলাকে লকডাউন করা হবে কিনা জানতে চাইলে উপমা জানান, দেখুন লকডাউন করার ব্যাপারটি আমার একার নয়। উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সকলের মতামতের ভিত্তিতে এবং পরিবেশ পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে উপজেলা লকডাউন করা হবে কিনা।
পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ৭ মে পটিয়া হতে ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ফৌজদারহাট করোনা সেন্টারে পাঠানো হয়। সেই ২০ জনের মধ্যে ১১ জনের করোনা পজিটিভ আসে ১১ মে রাতে।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত পটিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়ে ঠেকেছে ১৬ জনে। ইতোমধ্যে হাসপাতাল হতে করোনাকে জয় করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার মধ্যে পটিয়ার প্রথম করোনা আক্রান্ত হওয়ার দিনই হাসপাতালে নেয়ার পর প্রতিবন্ধী (বোবা) শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













