মিঠুন বড়ুয়া »
‘ন্যাংটোর নেই পাগলের ভয়’ এই কথাটি সত্য বলে প্রতীয়মান হবে যখন আপনি দেখবেন-এই দুর্যোগে টেম্পুর ড্রাইভার রিকশা চালাচ্ছে, হোটেল বয় ফ্লাক্সে করে চা বিক্রি করছে কিংবা গ্যারেজের মিস্ত্রি অটো চালাচ্ছে। তারা যেহেতু পড়ালেখা বেশি করেনি বা সমাজে মান-সম্মানের কেয়ার তারা করে না, সেই কারণে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পেশা পরিবর্তন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
কিন্তু, অনার্স-মাস্টার্স করা যে ছেলেটি টিউশনি করে, কিন্ডারগার্টেন স্কুলে মাস্টারি করে সংসারের চালায়, সে কী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পেশা পরিবর্তন করে রিকশার ড্রাইভার কিংবা সিএনজি চালক হতে পেরেছে?
চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট কিংবা অন্যান্য শহরসহ দেশে প্রায়ই ১ লাখ ৭ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এখানে শিক্ষকতা করে সংসার চালায় হাজার-লক্ষ উচ্চশিক্ষিত যুবক। এখানে শিক্ষকদের সম্মানীর পরিমাণ শুনলে চোখ কপালে উঠবে। মাত্র তিন থেকেপাঁচ হাজার টাকা মাসিক বেতনে শিক্ষকতা করেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স করা উচ্চশিক্ষিত যুবসমাজ।
এই যুব সমাজের স্কুলের বেতন দিয়ে সংসার চলে না। তাদের সংসার চলে ঐ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে কোচিং কিংবা প্রাইভেট পড়িয়ে। তার মানে কচুর চেয়ে লতি ভাল। কিন্তু, কচু গাছই যখন সংকটাপন্ন, সেখানে লতির আশা করাটা বৃথা।
এই লকডাউনে কোচিং, প্রাইভেট, স্কুল বন্ধ। কী করবে এই উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা? বাড়িওয়ালা কয় মাস বাড়িভাড়া বকেয়া মানবে? যাদের বউ-বাচ্চা নিয়ে শহরে আছে তাদের চোখের পানি আর ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার আশংকায় রাতে কী ঘুম হয়? সেই খবর কী রাষ্ট্রযন্ত্র জানে? এর দায় কী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে বেড়ে উঠা তরুণটির? এর জন্য কী আমাদের সমাজব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী নয়?
সতের কোটি জনগণের দেশে পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ সরকারের কাছ থেকে নগদ অর্থ সহায়তা পাচ্ছে। এই পঞ্চাশ লক্ষ মানুষ তারাই যারা পেশা পরিবর্তন করে লকডাউনে ক্ষেতে-খামারে কাজ করে কিছুটা হলেও উপার্জন করার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু যে মানুষটি আয়ের দিক থেকে রিকশাওয়ালার চেয়ে ও অধম, যে সম্মান হারানোর ভয়ে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ন্যূনতম টাকা ধার চেয়েও পায় নি তাকে আপনি কী করে আর্থিক প্রণোদনার কাতারে ফেলবেন?
লেখক : শিক্ষক- হালিশহর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম













