ফেরদৌস শিপন »
প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা থাকলেও আম্ফান এমন এক সময়ে আসছে, যখন দেশ লড়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উপকূলীয় অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থান দেয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এবার উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় আম্ফান।
দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরবর্তী সময়ে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষ রাত থেকে বুধবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
করোনাভাইরাসের এমন সংকটময় মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ আমাদের জন্য মহা দুর্যোগের আরেকটি বার্তা। চলমান যুদ্ধে তাই সবাইকে কৌশলী এবং ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। যদি অসচেতনতা লক্ষ্য করা যায়, তাহলে আমাদের সচেতনতা আসবে কবে? এজন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের আরও কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবরে জানতে পেরেছি, বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে উপকূলীয় জেলাগুলোয় সাইকোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে এবার করোনা সংক্রমণের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়ে বাড়তি চিন্তা মাথায় রেখে এগুতে হবে।
গত বছরের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানার আগে মাত্র ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার মধ্যে ২২ লাখ বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের। এটা ঠিক যে, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন আগের চেয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সক্ষমতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গত দশ বছরে দেশে মোট ৭টি বড় ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। আইলা, সিডরের সময় বাংলাদেশের কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।
সে সময় ক্ষয়ক্ষতি বেশি ছিল কারণ আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু এখন বাংলাদেশ অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ কথা অনস্বীকার্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমবেশি আসবেই। প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মানুষের চেষ্টায় যে কমিয়ে আনা সম্ভব তাতে সন্দেহ নেই। যতটা সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ছোবল থেকে রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













