২৯ অক্টোবর ২০২৫

পটিয়ায় ক্রমেই বাড়ছে করোনা ‘পজিটিভ’, একদিনে আক্রান্ত ৪৯ জন

কাউছার আলম, পটিয়া »

সারা দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ৮৫তম দিনে পটিয়ায় এযাবৎ কালের একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা পজিটিভ রোগী সনাক্ত হয়েছে। গতকাল (২ জুন) মধ্যরাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

চট্টগ্রামে অন্যান্য উপজেলার চেয়ে পটিয়াতে আশংকা জনক হারে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলেও একদিনে ৪৯ জন সনাক্ত হওয়ায় পটিয়াজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পর্যন্ত ১৪৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। ইতো মধ্যে মারা গেলেন ৬ জন।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ শনাক্ত হওয়া রোগীদের গত ১ লা জুন ৯৩ জনেন নমূনা সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে রিপোর্টের জন্য বিআইটিআইডিতে পাঠানো হলে ২ জুন রাতে তাদের মধ্যে ৪৯ জনের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ শনাক্ত হয়ে আসে।

বিশ্ব মহামারি করোনার প্রাদূর্ভাবে পটিয়ায় বাড়ছে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা। শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনার তীব্রতা। ছড়াচ্ছে আশপাশের উপজেলাতেও। উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও জনগণের উদাসীনতায় প্রতিদিনই করোনা ‘পজিটিভ’ রোগীর সন্ধান মিলছে বলে অভিমত সচেতন মহলের। ফলে বাড়ছে উদ্বিগ্নতা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ পর্যন্ত ১৪৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গত মাসের ১২ এপ্রিল ৬ বছরের এক শিশুর শরীরে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ঐ দিন রাতে জেনারেল হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। কয়েকদিন আগে পটিয়ায় একটি পরিবারের একজনের সংস্পর্শে আসা ঐ পরিবারের শিশু সহ ৯ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই সংখ্যাটা হু হু করে বাড়তে থাকে। বাদ যায়নি পটিয়া হাসপাতালের করোনার নমুনা সংগ্রহকারীর পরিবারের লোকজনও। দুইজন নমুনা সংগ্রহকারীর পরিবারের স্ত্রী, বৃদ্ধ বাবা ও অবুঝ দুই শিশুর শরীরে ও করোনা ভাইরাসের উপস্থিত পাওয়া গেছে।

এছাড়াও করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন ৩ জন। তবে এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেছেন ২ জন। রোগী বাড়ার পাশাপাশি করোনার উপসর্গ নিয়ে ধীরে ধীরে মৃতের সংখ্যাও দীর্ঘ হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত ১৪৮ জনের দেহে করোনা পজিটিভ এসেছে। করোনায় এ নিয়ে পটিয়ায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি যথাযথ চিকিৎসায় ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ জন করোনা রোগী।

এভাবে দিন দিন করোনা পজিটিভ রোগী বাড়ায় সচেতন মহল আতংকিত উল্লেখ করে পটিয়ার প্রবীণ চিকিৎসক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ একেএম নাছির উদ্দীন বলেন, করোনা যেহেতু ছোঁয়াছে ভাইরাসজনিত রোগ সেহেতু শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন নানা সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়েছে। প্রশাসনের সাথে সচেতনতা চালিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনও। কিন্তু সবকিছুকেই উদাসীনভাবে নিয়েছে জনসাধারণ। ফলে এখন এর কুফল দৃশ্যমান হচ্ছে। সবকিছুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করায় প্রতিদিন বাড়ছে করোনা পজিটিভ রোগী। ধীরে ধীরে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও।

পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা বলেন, বিশ্বময় করোনার ধকল দেখে শুরুতেই পটিয়ার সর্বস্তরের জনগণকে রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সব ধরনের জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এখন পর্যন্ত। কিন্তু দুঃখের বিষয় জনসাধারণের উদাসীনতা আর অসচেতনতার কারণে জনতা চোর-পুলিশ খেললেও কঠোরতার কারণে দীর্ঘ দু’মাস যাবৎ নানা কর্মকাণ্ডের মাঝেও করোনার প্রাদুর্ভাব কেবল বাড়ছে।

‘কিন্তু সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করে সম্প্রতি সব ধরনের ঈদ মার্কেট বন্ধ ঘোষণার পর ও কিছু ব্যাবসায়ীরা আড়ালে দোকানগুলো খোলা রাখার কারণে অবিবেচকভাবে ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। ফলে, পটিয়ায় এখন করোনার ‘পজিটিভ’ সংখ্যা বাড়ছে। এরপরও যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োগ হওয়ায় মৃত্যুর হার কমই রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখনো বলছি, সচেতনতা ছাড়া করোনার প্রাদূর্ভাব কমানো অসম্ভব। নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা সচেতন হলে করোনার গতি ধরে রাখা সম্ভব।’

পটিয়ায় গতকাল সনাক্ত হওয়া করোনা পজিটিভ ৪৯ জনের মধ্যে পৌরসভায় ১নং ওয়ার্ড -১জন, ৪নং ওয়ার্ড- ৪জন, ৫নং ওয়ার্ড- ১জন, ৬ নং ওয়ার্ড-৫ জন, ৭নং ওয়ার্ড- ২জন, ৮নং ওয়ার্ড- ৬ জন, ৯নং ওয়ার্ড- ১জন, পটিয়া থানা-১জন, মুন্সেফবাজার-১জন, উপজেলা অফিস-১জন মৎস্য অফিস- ২ জন, খাসমহল রোড- ২জন, ঠিকানা বিহীন – ১জন, ইউনিয়ন গুলোর মধ্যে ছনহরা- ১জন, আশিয়া- ১জন, কুসুমপুরা- ৩জন, শোভনদন্ডী- ২জন, জঙলখাইন- ১জন, কেলিশহর- ১জন, হাইদগাঁও- ১জন, মনসা- ৩জন, হাবিলাসদ্বীপ- ৫জন ও খরনা- ৩জন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন