শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত, মিরসরাই »
ঈদের ছুটি শেষে ২৮ এপ্রিল জীবিকার তাগিদে আবুল কাশেমকে যোগ দিতে হয়েছিলো তার কর্মস্থল মিরসরাই উপজেলা বিএসআরএম ফ্যাক্টরিতে। অন্যান্য শ্রমিকদের সাথে থাকতেন সোনাপাহাড় এলাকার একটি ম্যাচে।
চলে আসার সময় ৩ সন্তানের মাথায় হাত বুলিয়ে স্ত্রীকে বলেছিলেন- ‘এই সপ্তাহে আসা হবে না, কাজের চাপ অনেক বেশি।’ তবে কে জানতো এই বিদায়ে যে বেজে যাবে চিরবিদায়ের সু্র। এরপর আর যাওয়া হয়নি নিজ গ্রাম মিরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নের কচুয়ায়। দেখা হয়নি কারো সাথে। ঈদের সময়ের সেই দেখা ছিলো শেষ দেখা।
শনিবারের (৬ জুন) দিনটিতে সকাল থেকে ছিলো থেমে থেমে বৃষ্টি আর রোদের ঝলকানি।ভোরে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন আবুল কাশেম। তবে তার মন পড়ে রয়েছে বাড়িতে। স্বপ্নের রাস্তায় কেবল মাত্র হাঁটা শুরু করেছেন তিনি। কেননা বড় ছেলে তানভীর হোসেন ইমন সবেমাত্র এসএস সি পাশ করেছে। তাকে ভর্তি করাতে হবে কলেজে। অভাবের সংসারে যেন সামান্য তৃপ্তির খোঁজ পেয়েছিলেন তিনি। কারণ ছেলে একদিন বড় হবে, সংসারের হাল ধরবে।
এদিকে বেলাও বেড়ে সকাল পেরিয়ে দুপুরে ফোন দিয়েছেন স্ত্রী শাহীনুর আক্তারকে।বলেছিলেন আজ আমাকে আরেক জনের জায়গায় ডিউটি করতে হবে। কিন্তু কে জানতো, এই কথাটি আবুল কাশেমের জীবনের শেষ বাক্য।
বিকেল ৩ টায় মিরসরাই উপজেলার বিএসআরএম ফ্যাক্টরিতে হঠাৎ বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে হইকাল থেকে চিরবিদায় হয়ে যান তিনি। নির্ধারণ হয়ে যায় পরপারের গাড়ি। ততক্ষণে মৃৃত্যুর খবর পৌঁছে গিয়েছে আবুল কাশেমের গ্রামের বাড়ি। স্ত্রীর চিৎকার আর প্রতিবেশীদের হাহাকার, তিন সন্তানের জনক আবুল কাশেম নেই আর। মসজিদের মাইকে সেই ঘোষণা দিচ্ছে বার বার।
আবুল কাশেম জানিয়েছিলেন, ৭ জুন তিনি বাড়ি ফিরবেন। কথা তিনি রেখেছেন, ঠিকই বাড়ি ফিরছেন। তবে নিথর দেহে। অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে আর একমাত্র মেয়ে সাদিয়া আফরিনের বিলাপ শুনতে শুনেত কিংবা চল্লিশ কদম গুনতে। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে চলে গেলেন তিনি। রেখে গেলেন তিন সন্তান এবং একমাত্র স্ত্রী।
অভাবের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি কিংবা পরিবারের ছায়া আজ হারিয়ে গেলো চিরতরে। উনার স্বপ্ন ছিলো একদিন বড় ছেলে হাল ধরবে পরিবারের। কিন্তু কে জানতো সেই স্বপ্ন এভাবেই এখানেই শেষ হয়ে যাবে!
জীবনের যৌবন নামক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ১৮ টি বছর প্রবাসে কাটিয়েছিলেন নিহত আবুল কাশেম। তারপরও দুঃখকে সুখে রুপ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দেশে ফিরে গত ২ বছর আগে চাকুরি নেন বিএসআরএম ফ্যাক্টিরতে। স্বল্প বেতনের চাকুরি হলেও পরিশ্রম করে পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতেন। ১২ শতক জায়গা কিনে উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নে করেছেন একটি বাড়ি তবে অভাবের গ্লানি মুছতে সেটি দিয়েছেন বন্ধক। এরই মাঝে তিনি চলে গেলেন পরপারে।
নিহতের স্ত্রীর বড় ভাই আব্দুর রহিম জানান, আমার ২ জন ভাগিনা। আজ তারা এতিম হয়ে গেলো। পরিবারের বড় ছেলে মাত্র এসএসসি দিয়েছে। জানি না কী হবে! যে প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি প্রাণ দিয়ে গেলেন সে বিএসআরএম কতৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করেন আব্দুর রহিম।
অবশেষে আবুল কাশেম কথা রেখেছেন। বাড়িতে তিনি ফিরছেন। তবে নিথর দেহে সাদা কাপনে জড়িয়ে। চলে গেলেন পরপারে, সন্তানদের এতিম আর স্ত্রীকে বিধবা সাজিয়ে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













