২৫ অক্টোবর ২০২৫

হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও কেন চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা!

ফেরদৌস শিপন »

চট্টগ্রামের হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। গত কয়েকদিন ধরে এমন খবর শুনছি, দেখছি অসংখ্য।

গত ৯ জুন মঙ্গলবার সকালে বুকে ব্যথা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা মেলেনি বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরের। সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে তিনি গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করলে শফিউল আলম ছগীরকে একটি মাইক্রোতে করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে, তারপর নগরের ও আর নিজাম রোডের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল সেন্টারে, এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়ার পরে তাকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশনায় পাঁচলাইশ পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও ততক্ষণে শফিউল আলম ছগীরকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। গাড়িতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

শুধু শফিউল আলম ছগীর নয়, তার মতো অনেকেই চিকিৎসা সেবা না পেয়ে মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রামের আরেক ব্যবসায়ীর মেয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার বাবা যে কষ্ট ভোগ করেছেন তা আমি ভুলব না। হাসপাতালগুলো ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সে রাখতে হয়েছিল। আমি চাই না যে আর কেউ এ ধরনের দুর্ভোগের মুখোমুখি হোক এবং চিকিৎসার অভাবে মারা যাক।’ আমরা প্রতিদিন এধরণের খবরে দেখছি, জানছি এবং শুনছি।

অথচ দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতাল ঘুরে-ঘুরে চিকিৎসা না পাওয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অধিগ্রহণ ও অনলাইনে সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো চালুর নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিটের শুনানিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ উষ্মা প্রকাশ করেন। করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই দেশের নানা হাসপাতালে অন্যরোগে আক্রান্ত সাধারণ রোগীরা নানারকম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। হয়রানির শিকার হয়ে কয়েকজনের মৃত্যুর অভিযোগে নানা গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশও হয়েছে। বিষয়টি দেশজুড়ে ও সামাজিক মাধ্যমে আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই এই রিটের প্রেক্ষাপট।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘করোনার এই ক্রান্তিকালে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে থাকা প্রায় সাত শতাধিক আইসিইউ সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ ও অনলাইনে “সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো” চালুর নির্দেশনা চেয়ে রোববার একটি রিট করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল আল মামুন।

অথচ অসুস্থ ব্যক্তি এবং তাদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা চিকিৎসা পরিষেবা পেতে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে চলেছেন এবং করোনার এ সংকটের সময়ে অন্য গুরুতর রোগীরা কিভাবে চিকিৎসা পাবেন বা রোগ নির্ণয় করাবেন সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় অনেক রোগী চিকিৎসা পাওয়ার আগেই মারা যাচ্ছেন।

মৌলিক অধিকারের একটি চিকিৎসা। করোনার এই সময়ে সারাবিশ্বজুড়েই চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বাংলাদেশেও কমবেশি সেই প্রভাব পড়েছে। তবে রোগীদের প্রতি মানবিক আচরণের পরিবর্তে অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পেশাদারী মনোভাবের অভাবে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। করোনা সঙ্কটকালীন সময়ে অনেক ডাক্তার, নার্স ও হেলথ টেকনিশিয়ান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, রোগীরা করোনার তথ্য লুকিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক হাসপাতালকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছেন, এসব প্রেক্ষাপটে হয়তো অনেক হাসপাতাল চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করেছে।

কারণ যাই হোক, এ অবস্থার পরিবর্তন হওয়া দরকার। হাইকোর্টের দৃষ্টিতে বিষয়টি আসার পরে তা আরও যৌক্তিক দাবি হিসেবে সামনে এসেছে।

করোনার ভয়কে দূরে ঠেলে পেশাদারী মনোভাব নিয়ে হাসপাতাল-ডাক্তাররা চিকিৎসা দেবেন, আর রোগীরা সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করলে এ অবস্থার পরিবর্তন আসতে পারে। দেশের আর একটি মানুষও যেন হয়রানির শিকার হয়ে বা বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করেন, সেদিকে নজর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কার্যকরে সচেতন হয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আমাদের আশাবাদ।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাধারা ডটকম

আরও পড়ুন