২৬ অক্টোবর ২০২৫

করোনার প্রভাবে স্থবির সীতাকুণ্ডের জাহাজ ভাঙা শিল্প

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি »   

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে উপজেলায় অবস্থিত দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প বৈশ্বিক মহামারী করোনার নেতিবাচক প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত কয়েক মাস আন্তর্জাতিক বাজার থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি, ভাঙা ও মালামাল ক্রয়-বিক্রয় থমকে থাকায় স্ক্র্যাপ লোহাসহ জাহাজের পন্যগুলোর ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসানের শিকার হয়েছে এ শিল্প। এ চরম ক্ষতি পোষাতে স্ক্র্যাপ জাহাজের এডভান্স টেক্স প্রত্যাহারের দাবী জানিয়েছেন মালিকরা।

করোনায় স্ক্র্যাপ লোহার দাম কমে যাওয়াসহ এডভান্স টেক্সসহ অনেক রকমের টেক্স আরোপের ফলে এ শিল্পটি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানান, জাহাজ আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স এন্ড রি-সাইক্লার্স এসোসিয়েশনের কার্য নির্বাহী সদস্য এস.এল ষ্টিল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ লোকমান।

তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সাপোর্ট দিচ্ছে সরকার। সেখানে একজন শিপব্রেকার্স শুরু থেকে সরকারকে যে টাকা ব্যক্তিগত টেক্স দিয়েছেন তার অর্ধেক বা একটি অংশ তাকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রদান করে ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করা হচ্ছে। আমাদের তা না করলেও এডভান্স টেক্স প্রত্যাহার এবং ব্যাংক সুদ কমালেও ব্যবসায়ীরা রক্ষা পাবেন। নচেৎ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে মোট ১৬০টি জাহাজ ভাঙা উঠোন রয়েছে। তবে ক্রমাগত লোকসানের কারণে বেশিরভাগই শিপইয়ার্ড বন্ধ হয়ে বর্তমানে এখানে ৬০-৬৫টির মত ইয়ার্ডে সচল আছে। বাংলাদেশে কোন লৌহ খনি নেই। এ কারণে গোড়াপত্তনের পর থেকেই জাহাজ ভাঙা শিল্পই এ দেশে ভাসমান লৌহ খনি হয়ে দেশের যাবতীয় নির্মাণ শিল্পে লোহার যোগান দিয়ে চলেছে। প্রতিবছর এখানে লাখ লাখ টন স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়।

২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ২৫৫টি স্ক্র্যাপ জাহাজ ভাঙা হয়। সে বছর ভারত-চীনকে পেছনে ফেলে জাহাজ ভাঙায় শীর্ষস্থান অর্জন করে বাংলাদেশ। জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে পাওয়া স্ক্র্যাপ লৌহ সরবরাহ হয় দেশের ৩৫০টির বেশি রি-রোলিং মিলসে। এ থেকেই রড তৈরী হয়। এছাড়া জাহাজে পাওয়া আসবাবপত্র, পেইন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, লুব্রিক্যান্ট, তৈলসহ নানান পণ্য পুনঃপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহার করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় দেশ।

এ শিল্প বছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকে সরকারকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের উচ্চ সুদে ব্যাংক লোন এনে জাহাজ আনতে হয়। এছাড়াও থাকে নানান চাপ। যার ফলে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনে অনেকে দেউলিয়ার পথে। এরপরও গত কয়েক বছরে অতীতের লোকসান কাটিয়ে যখন শিল্প উদ্যোক্তারা আবারো মাথা উঁচু করে দাড়ানোর পথে তেমনি সময়ে হানা দিয়েছে বৈশ্বিক মহামারী করোনা।

বারআউলিয়ার প্রাইম শিপব্রেকিং লিঃ এর সত্বাধিকারী এস.এম নুরুন্নবী মানিক জানান, স্ক্র্যাপ জাহাজ আনতে আমরা ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে লোন নিয়ে থাকি। জাহাজটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিনে দেশে আনার প্রক্রিয়ায় ৮০-৯০ দিন সময় লেগে যায়। ঋন গ্রহন করে জাহাজ দেশে আনা পর্যন্ত এ তিন মাস সময়ে কখনো কখনো কোটি টাকার বেশি সুদ এসে যায়। এবার তার উপর করোনার নেতিবাচক প্রভাবে জাহাজ কিনে মালিকরা লোকসান গুনছেন। করোনার আগে কেনা জাহাজগুলো এখানে আনার আগেই আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন হয়। এর ফলে বিরাট অংকের লোকসানে পড়েছে এ শিল্প।

তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বরে মালিকরা জাহাজ কেনেন প্রতি টন ৪৬৫-৪৭৫ ডলারে। অর্থাৎ প্রতিটন স্থানীয় স্ক্র্যাপ লোহার ক্রয়মূল্য পড়ে ৩৬ হাজার টাকা এবং ৫-৮ স্ক্র্যাপ লোহা ৪৪ হাজার টাকা। কিন্তু করোনায় ব্যবসা বন্ধ থাকায় সেসব লোহার দাম কমে যথাক্রমে ২৭ হাজার ৫শ এবং ৩২ হাজার টাকা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি টন লোহা বিক্রির আগেই লোকসান হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা। এছাড়া অনেক রকম টেক্স দিতে হয় ব্যবসায়ীদের।

তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ যে ৫ শতাংশ এডভান্স টেক্স আমাদের উপর আরোপ করা হয়েছে তাতে একটি জাহাজ আনার আগেই কোটি টাকা বা তারও বেশি টেক্স দিতে হচ্ছে। এতে পুরো শিল্পটি হাজার কোটি টাকা লোকসানের শিকার হয়েছে। এই টেক্স প্রত্যাহার করা হলে শিল্পটি ঘুরে দাড়াতে পারবে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন