২৪ অক্টোবর ২০২৫

শ্বাসকষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পারে ‘পকেট হাসপাতাল’!

জালালউদ্দিন সাগর »

করোনা আক্রান্ত- এমন সন্দেহে ভর্তি নিচ্ছে না বেসরকারি হাসপাতালগুলো। সময় মতো সঠিক চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেনা সরকারি হাসপাতালেও। আইসিইউ-ভেন্টিলেটর এমন কী সামান্য অক্সিজেনসেবাও অপ্রতুল নগরীতে। হাসপাতালে নিতে নিতেই শ্বাসকষ্টে পথের মধ্যে মারা যাচ্ছে রোগী। করোনা আক্রান্ত নয় এমন রোগীর ক্ষেত্রেও ঘটছে একই ঘটনা।

গত এক সপ্তাহে শুধুমাত্র শ্বাসকষ্ট যন্ত্রণায় মারা গেছেন বেশ কয়েকজন রোগী-এমন পরিস্থিতে শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের শ্বাসকষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে ‘পকেট হাসপাতাল’ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এলাকা বা ওয়ার্ডভিত্তিক গড়ে ওঠা ৫ অথবা ১০ বেডের অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার জন্য পকেট হাসপাতাল ‘ফাস্ট এইড বক্স’র মতোই কাজ করবে।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, ব্যক্তি কিংবা সামাজিক কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ৪/৫টি অক্সিমিটার, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ নেব্যুলাইজার মেশিন নিয়ে পকেট হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব।

সেক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০জন ভলেন্টিয়ার নিজ উদ্যোগে অক্সিজেন ও নেব্যুলাইজার মেশিন চালানো শিখে পকেট হাসপাতালে আগত রোগীদের প্রাথমিক সেবা দিতে পারেন। প্রয়োজনে ওই হাসপাতালের সাথে জড়িত চিকিৎসকের সাথে অনলাইনে যোগযোগ করে কোন রোগীর ক্ষেত্রে কী পরিমাণ অক্সিজেন সাপোর্ট লাগবে সে দিক নির্দেশনাও নিতে পারে।

এলাকাভিত্তিক পকেট হাসপাতালের সুবিধা হলো, ওই এলাকায় কোনো রোগীর যদি হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সে ক্ষেত্রে পকেট হাসপাতালে এনে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে ঐ রোগীকে একটু স্থিতিশীল করা এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ মতো রোগীকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া।

এলাকায় অব্যহৃত ফ্লাটবাড়ি, বন্ধ থাকা স্কুল কিংবা কোচিং সেন্টার, শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষণ কক্ষ, ওয়ার্ডভিত্তিক স্বাস্থকেন্দ্রগুলোতে পকেট হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। তবে এই উদ্যোগে অভিজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত করা সহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পোশাক বিশ্চিত করতে হবে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আমেরিকাসহ আরও কয়েকটি দেশে ‘কোভিড টেন্ট হসপিটাল’ নামে এমন স্বাস্থসেবা চালু করে আশানুরূপ ফল পেয়েছিলেন চিকিৎসারা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে কর্মরত চিকিৎসক ডা.জামান আহমেদ বলেন, হাসপাতালে আসার আগেই অনেক রোগী পথেই মারা যাচ্ছেন। পকেট হাসপাতাল সে মুমূর্ষু রোগীকে জরুরিভাবে অক্সিজেন ও নেব্যুলাইজার সাপোর্ট দিবে।

তিনি আরও বলেন, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগী সময় মতো অক্সিজেন সাপোর্ট পেলে অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং সুস্থও হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, একটি এলাকায় বসবাসরত কয়েক হাজার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টে ওঠে মাত্র কয়েকজনের। অথচ শ্বাসকষ্ট আতংকে অনেকেই ইতোমধ্যে ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করা শুরু করেছে। পকেট হাসপাতাল ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করা কমাবে।

ডা. জামান আহমেদ আরও বলেন, কেউ যদি উদ্যোগী হয়ে পকেট হাসপাতাল করতে চান সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সহযোগিতা নিতে পারেন। বিএমএ’র প্রায় দুই হাজার চিকিৎসক টেলিমেডিসিনের সাথে যুক্ত আছেন। এছাড়া যে এলাকায় পকেট হাসপাতাল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন সে এলাকাতে বসবাসরত অনেক চিকিৎসক আছেন যারা মানবিক এই উদ্যোগে আপনাদেও সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসবেন।

নগরীর ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আরিফ বাচ্চু বলেন, এই ধরনের ক্লিনিক্যাল ব্যবস্থাকে উন্নত বিশ্বে ‘কোভিড টেন্ট হসপিটাল’ হিসেবে পরিচিত। এই মুহূর্তে আমাদের দেশেও প্রিতিটি এলাকায় এই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ, কারণ কোভিড রোগী এত বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে যে, কনো হাসপাতালের বেড খালি নাই।

তিনি আরও বলেন, মানুষ চিকিৎসা নেয়ার জন্য হাসপাতালে সিট পাচ্ছেনা। তাই এলাকাভিত্তিক এই ব্যবস্থা খুব ভাল উদ্যোগ। তবে, অবশ্যই তা সততা ও মানবিকতা নিয়ে তরুণদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। কোভিড পজিটিভ থেকে সুস্থ হওয়া তরুণ ভলেন্টিয়াররা এই কাজে এগিয়ে আসা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই স্বাস্থ কেন্দ্র রয়েছে। সে সব স্বাস্থ কেন্দ্রকেও পকেট হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। যাঁরা রোগীদের জরুরি সেবা দিতে চান তাঁরা সে সব স্বাস্থ কেন্দ্রের মাধ্যমেও পকেট হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিতে পারেন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন