তারেক মাহমুদ »
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য চালু হতে যাচ্ছে সাড়ে তিন’শ শয্যার দুটি আইসোলেশন সেন্টার। এর মধ্যে তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের উদ্যোগে একশো ও সিটি কর্পোরেশনের আড়াইশো শয্যার সেন্টারে বিনামূল্যে পাওয়া যাবে চিকিৎসা সেবা। শুধু আইসোলেশান সেন্টার নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা হচ্ছে মিনি হাসপাতালও।
চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চার হাজার পার হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১শ’ জনের বেশি। সেই সাথে চিকিৎসা না পেয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ।
এমন একটি কঠিন সময়ে নগরীর চাঁন্দগাও এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে মিনি হাসপাতাল গড়ে তুলে মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন এক তরুণ ব্যবসায়ী। হামিদচর এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শয্যার এই হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে। সেই সাথে ব্যবস্থা করা হয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার, থার্মাল স্ক্যানার, অক্সিমিটার, নেবুলাইজার, গ্লুকোজ মিটারসহ প্রয়োজনীয় মেডিকেল সরঞ্জাম। এছাড়া ব্যবস্থা করা হয়েছে চিকিৎসক, স্বচ্ছোসেবীদেরও। অক্সিজেনের অভাবে বিনা চিকিৎসায় যাতে এলাকার কোন মানুষকে মারা যেতে না হয় সেই লক্ষ্যেই এটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানান মিনি হাসপাতালের উদ্যোক্তা ইকবাল হোসেন।
তিনি বলেন, আমার জন্য যদি কেউ সামান্যতম চিকিৎসাটাও পায় অর্থাৎ আমি এমনটা শুনতে চাচ্ছি না যে আমাদের এলাকার মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা গেলো।
এদিকে কিছু রাজনৈতিক তরুণদের যৌথ প্রচেষ্টায় নগরীর হালিশহর এলাকায় কমিউনিটি সেন্টারে গড়ে তোলা হচ্ছে ১শ’ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার । দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে এর নির্মাণ কাজ। এখানে অক্সিজেন সুবিধাসহ সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে করোনা আক্রান্ত রোগীদের।
করোনা আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোক্তা নুরুল আজিম রনি বলেন, মানুষকে যদি আমরা আইসোলেটেড করতে পারি তাহলে করোনার সংক্রমণ অনেকটা রোধ করা যাবে। আমরা দেখছি মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে। ওইখান থেকে আমরা কিছু মানুষকে অন্তত বাঁচাতে পারবো।
অন্যদিকে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকার সিটি হলে গড়ে তোলা হচ্ছে আড়াইশ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার। এখানে বিনামূল্যে অক্সিজেনসহ সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে।
প্রতিদিনই চট্টগ্রামের করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি স্বাস্থ্যসেবার মান। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন করোনা আক্রান্ত রোগীরা। সেক্ষেত্রে কিছু তরুণ এবং ব্যক্তির বিশেষ উদ্যোগে চট্টগ্রামে যে আইসোলেশন সেন্টারগুলো নির্মিত হচ্ছে সেগুলো যদি কাজ শুরু করতে পারে তাহলে চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’র তরুণ উদ্যোক্তাদের মুখপাত্র হিসেবে মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বৈশ্বিক এই দুযোর্গে আমরা সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি। আগামী ১৫ দিন পরে কি হবে কেউ জানিনা। এই অবস্থায় আমাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। আসুন আমাদের যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরে মানুষের পাশে দাঁড়াই।’
‘আমরা একশ জন থাকতে পারবে এমন একটা আইসোলেশন সেন্টার করতে চাই। যেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট থাকবে, স্বাভাবিক চিকিৎসাগুলো হবে, থাকবে ভালোবাসাময় সেবা।’
এটি কোন আত্মপ্রচারমূলক প্রকল্প নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা কোন আত্মপ্রচার প্রকল্প হবেনা। আমরা করেছি বলে আমিত্ব জাহিরের কোন প্রকল্প হবেনা। এটা সত্যিকার অর্থে মানুষের জন্য একটা সেবার জায়গা হবে। সেখানে করোনা রুগীরা খাবে, চিকিৎসা পাবে, সেবা পাবে, মানসিক সাপোর্ট পাবে।’
সাবেক এই ছাত্রনেতা তরুণদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের এই উদ্যোগে সাথে যদি কেউ সারথী হতে চান, তাহলে হাত তুলুন। আমরা একশ জনের দায়িত্ব নিতে চাই। আপনি কতজনের দায়িত্ব নেবেন? আসুন একসঙ্গে কাজ করি। আমাদের শক্তিগুলো এক জায়গায় করি। ভালোবাসাগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করি। ঐক্যবদ্ধ ভালোবাসার শক্তি অনেক বড় শক্তি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক চর্ম ও যৌন রোগের বিভাগীয় প্রধান ও ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রাম’র উপদেষ্টা প্রফেসর এ কে এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেভাবে রোগী বাড়ছে বেডের সংকোলান হচ্ছে না, আর সব রোগী বেডে রাখে না। প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ রোগী বাসায় থেকেই চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু আইসোলেশনে তো আলাদা রুম লাগবে, আলাদা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে, এটাতো অনেকের বাসায় সম্ভব না।
আইসোলেশন সেন্টার তৈরির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের থাকে প্রায় দু’টো রুম, একটি রুম আইসোলেশন থাকলে আরেকটিতে অন্যদের পক্ষে থাকা সম্ভব হয় না। যদি আইসোলেশনের জন্য আলাদা হওয়া যায় তাহলে পরিবারের সদস্যদের জন্য সুবিধা হয়। মূলত পারিবারিক ঝামেলা ও হাসপাতালের রোগীর চাপ কমানোর কথা চিন্তা করেই আমরা এই আইসোলেশন সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছি।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













