২৬ অক্টোবর ২০২৫

ব্যাংকারদের বেতন-ভাতা কমাতে বিএবি’র চিঠি

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

দেশের সব ব্যাংকের এমডি ও চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে আগামী দেড় বছরের জন্য ১৫ শতাংশ বেতন-ভাতা কমানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।

সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে ব্যাংকগুলোয় চলমান নিয়োগসহ সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখার সুপারিশও করেছে বিএবি।এছাড়া নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও উপশাখা খোলা বন্ধ রাখার সুপারিশও করা হয়েছে।

একই সঙ্গে কর্মীদের পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট, ইনসেনটিভ বোনাস বন্ধ করাসহ ব্যাংক বাঁচাতে ১৩ দফা সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। গতকাল এসব সুপারিশ সংযুক্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে দেশের সবক’টি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে।

এছাড়াও পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইনে কোনো বিজ্ঞাপন না দেওয়াসহ খরচ কমাতে ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই চিঠি পেয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক ব্যাংকের এমডি। শুধু মালিকদের স্বার্থরক্ষায় এভাবে খরচ কমালে কর্মকর্তারা মনোবল হারাবেন বলে মনে করেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ডিসেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত ৫৯টি ব্যাংকে বর্তমানে জনবল রয়েছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকে আছেন এক লাখ ৯ হাজার ১২৭ জন। বিদেশি ব্যাংকে তিন হাজার ৮৫৮ জন। আর সরকারি ব্যাংকে ৬৫ হাজার ৪৪৫ জন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব গ্রেডের  যেসব কর্মকর্তা ও নির্বাহীর মাসিক গ্রস বেতন ৪০ হাজার টাকার বেশি তাদের সবার ১৫ শতাংশ কমাতে হবে। আগামী দেড় বছর পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট ও ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যাবে না। ব্যাংকের চলমান নিয়োগসহ সব নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। এখন থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকা এবং টেলিভিশনে সব ধরনের বিজ্ঞাপন বন্ধ রাখতে হবে। নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং শাখা এবং সাব-ব্রাঞ্চ খোলা যাবে না। সব ধরনের স্থায়ী সম্পদ কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সব বিদেশি ট্যুর বন্ধ রাখতে হবে। সব ধরনের সিএসআর, ডোনেশন, চ্যারিটি বন্ধ রাখতে হবে। সব গ্রাহক গেটটুগেদার বন্ধ রাখতে হবে। অফিসার ও এক্সিকিউটিভ গেটটুগেদার ও ম্যানেজার কনফারেন্স বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করতে হবে। বড় ধরনের ব্যয় যেমন আইটি রিলেটেড, সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার কেনা আপাতত সীমিত পর্যায়ে রাখা। অন্য সব ব্যয় সীমিত পর্যায়ে রাখতে হবে। কর্মী ছাঁটাই না করে ব্যাংক সচল রাখার জন্য এসব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠির শুরুতে করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংক খাতের ১৩টি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উদ্ভূত অর্থনৈতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো- ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সুদের হার কমেছে। আদায় প্রায় শূন্যে নেমেছে। আমদানি-রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক বাণিজ্য কমার কারণে আনুষঙ্গিক আয় একেবারে কমেছে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স কমেছে। ক্রেডিট কার্ডে আদায় ও আয় কমেছে। এপ্রিল ও মে মাসের সুদ এক বছরের জন্য ব্লক করে রাখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সৃষ্ট আর্থিক দুর্গতি থেকে ব্যাংককে রক্ষা করার কথা বলে সম্প্রতি কর্মীদের বেতন-ভাতা ১০ শতাংশ কমিয়েছে দ্য সিটি ব্যাংক। একই সঙ্গে কর্মীদের পদোন্নতি বন্ধ, ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য ভাতাও কমিয়েছে ব্যাংকটি। সিটি ব্যাংকের মতোই বেঁচে থাকতে কর্মীদের বেতন-ভাতা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে অনেক ব্যাংক। গত মাস থেকেই এবি ব্যাংক এন্ট্রি লেভেল থেকে এমডি পর্যন্ত ৩ ও ৫ শতাংশ বেতন-ভাতা কর্তন করেছে। এক্সিম ব্যাংকও উদ্যোগ নিয়েছে বেতন-ভাতা কমানোর। বেসরকারি খাতের অন্যান্য ব্যাংকেও চলছে একই আলোচনা। এ পরিস্থিতিতেই দেশের সব ব্যাংকের কর্মীদের বেতন-ভাতা ১৫ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিল মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিএবি।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন