২৯ অক্টোবর ২০২৫

বরাদ্দ এলেও বাঁধ সংস্কারে অবহেলা; পানিতে তলিয়ে গেল ১০ দোকান ও ২৫ বাড়ি

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর জালালাবাদ মনজুর মৌলভীর দোকান এলাকার বেড়িবাঁধটি ভঙ্গুর অবস্থায় পতিত হয় বিগত বছর দুয়েক আগে। ঢলের তীব্রতায় তা ভেঙ্গে এলাকার জনবসতি ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় তা মেরামত করতে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় গত অর্থবছরের শুরুর দিকে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র এলজিএসপি প্রকল্পে বাঁধটি মেরামতে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ ফান্ডে বরাদ্দের ৩ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছিল গত বছরের শেষের দিকে। কিন্তু টাকা পেয়েও পরিষদ সংশ্লিষ্টরা বাঁধটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়নি গত ৮ মাসেও। ফলে গত বুধবারের (১৭ জুন) ভারি বর্ষণে ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী নদীতে নামা পাহাড়ি ঢলের তীব্রতায় ভেঙ্গে গেছে ‘মনজুর মৌলভীর দোকান’ এলাকার বাঁধটি। এতে ১০টি পাকা-সেমিপাকা দোকান, ২০-২৫টি বাড়ি, প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে পুকুরে সমন্বিত চাষের কয়েক লাখ টাকা মাছ।

ক্ষতিগ্রস্ত আতিকুর রহমান মানিক জানান, দীর্ঘ সংস্কার না হওয়ায় নদীর বাঁধটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে গত বছর দুয়েক আগে তা নাজুক পর্যায়ে পৌঁছে। ভাঙ্গনের ভয়ে লেখালেখির পর গত অর্থবছরে তা মেরামতে বরাদ্দ আসলে আমরা আশ্বস্ত হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে পরিষদের অবহেলার কারণে বাঁধটি ভেঙ্গে আমরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমার পুকুরে সমন্বিত চাষের প্রায় ৩ লাখ টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়ির আসবাব, তৈজসপত্র, ইলেকট্রনিকস পণ্য, বাগানের গাছ, গৃহপালিত প্রাণী। পানির স্রোতে পড়া প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একই ধরণের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে পাকা সড়কটিও। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ১০-১২ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ভাঙ্গন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)’র এলজিএসপি প্রকল্পের জেলা সমন্বয়ক বরুণ বড়ুুুয়া জানান, জালালাবাদ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মনজুর মৌলভীর দোকানের সামনের বেড়িবাধ সংস্কারে এলজিএসপির ফান্ড থেকে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা জানি। কিন্তু এতদিনেও কেন বাঁধটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হয়নি তা জানা নেই। তবে এতটুকু বলতে পারি এখনো টাকাটি খরচের অনুমোদন নেয়নি পরিষদ কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান রাশেদের মুঠোফোনে কয়েক বার কল করা হয়। রিং হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ওসমান সরোয়ার ডিপো বলেন, সরকারদলীয় চেয়ারম্যান হওয়ায় পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের তোয়াক্কাই করেন না চেয়ারম্যান রাশেদ। তাই কোথায় কি বরাদ্দ এলো, কোনটা কিভাবে করছে বা করছে কি না কোন কিছুই শেয়ার করেন না তিনি। আমার এলাকার এ বাঁধটি সংস্কারে টাকা এসেছে শুনেছিলাম কিন্তু তা দিয়ে কি করা হয়েছে, কেন এটা সংস্কার করা হয়নি তা আমাদের অজানা।

তিনি আরও বলেন, চেয়ারম্যানের অবহেলার কারণে এ কঠিন মুহূর্তে ২০-২৫ টি বসতবাড়ি, ১০টি দোকান, পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এখন বৃষ্টি থেমে গেছে তাই ঢলও কমেছে। আবার বৃষ্টি বাড়লে যদি ঢল আসে ভাঙ্গন এলাকার বাসাবাড়িগুলো আবারো প্লাবিত হবার আশংকা রয়েছে। চেয়ারম্যানের অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্যানেল চেয়ারম্যান ডিপো।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন