বাংলাধারা প্রতিবেদন »
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ১৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ দাশ বাদী হয়ে এই মামলাটি করেছেন। মামলার বিষয়টি সংবাদমাধ্যকে নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া।
তিনি জানান, চমেকে সংঘর্ষের ঘটনায় খোরশেদুল ইসলাম নামে আহত এক ছাত্র মামলা করেছে। মামলায় ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে আরও ২০ জনকে। আমরা মামলাটি রেকর্ড করে তদন্ত করছি।
দায়েরকৃত এজাহারে ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামীরা সবাই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
মামলার আসামিরা হল- চমেকের ৪৯ তম ব্যাচের ডা. সোহেল পারভেজ সুমন (৩৫), বিডিএস ১৮ তম ব্যাচের ডা. হিমেল চাকমা, বিডিএস ২৫ তম ব্যাচের ডা. সায়েম তানভীর, ৫৬ তম ব্যাচের ডা. ওয়াসিম সাজ্জাদ তানা, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. হাবিবুর রহমান, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. এম আউয়াল রাফি, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. ওসমান গনি, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. ফয়সাল আহমেদ, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. তাজুয়ান রহমান অয়ন, ৫৭ তম ব্যাচের শাহরিয়ার মো. রাহাতুল ইসলাম, ৫৮ তম ব্যাচের আল আমিন ইসলাম শিমুল, ৫৮ তম ব্যাচের শোয়েব আলী খান, ৫৯ তম ব্যাচের ওয়াহিদ মুরাদ শাহীন, বিডিএস ২৮ তম ব্যাচের মাহাদি বিন হাশিম, ৫৪ তম ব্যাচের ডা. আরমান উল্লাহ চৌধুরী, ৫৩ তম ব্যাচের ডা. নাভিদ তানভীর। এরা সকলেই
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি মাহমুদুল হাসান তুষার বলেন, মেডিকেল কলেজে কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার রাখে শুধুমাত্র বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ অনুমোদিত কোন বৈধ কমিটি নেই জানিয়ে, যারা সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানান তিনি।
এর আগে গত রোববার (১২ জুলাই) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) হাসপাতালে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় দুটি হাই ফ্লো নাসাল ক্যানুলা উপহার দিতে গিয়েছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান নওফেল এবং মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তাঁরা হাসপাতাল ত্যাগ করার পরপরই নওফেলের অনুসারী শিক্ষার্থীদের উপর পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও ডা. ফয়সাল ইকবালের অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ নওফেল অনুসারীদের।
ওই দিন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি ফেসবুক পেইজে এক স্ট্যাটাসে করোনা দুর্যোগে আজ আবারো ডা. ফয়সল ইকবালদের নষ্ট রাজনীতি ছি ছি উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিক্যালে দুর্নীতির সিন্ডিকেট কায়েমকারী ফয়সাল ইকবাল গংরা তাদের গডফাদারের নির্দেশে মানবিক সাহায্যকে বানচাল করতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আজ হামলা চালিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর। লাশ ফেলার হুমকিদাতাদের মদদে প্রকাশ্যে অছাত্র আর বহিরাগতরা মেডিক্যালের ছাত্রলীগের ভাইদের উপর আজ হামলে পড়েছে। তারা কী চায়? মানুষ সেবা না পাক? তাদের চাওয়া কী, মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাক?’
ডা. ফয়সাল ইকবাল ও তার গডফাদারের নির্দেশে এবং ইন্ধনে অনুষ্ঠান বানচালের জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে জানিয়ে তিনি লিখেন, ‘শিক্ষা উপমন্ত্রী ও কোতোয়ালী-বাকলিয়া আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং মেয়র প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী আজ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১২ লাখ টাকা মূল্যের দুইটি হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলা উপহার দিতে গেলে ডা. ফয়সাল ইকবাল ও তার গডফাদারের নির্দেশে এবং ইন্ধনে অনুষ্ঠান বানচালের জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়।’
প্রধামনমন্ত্রীর কাছে চট্টগ্রাম নগরীকে দানবমুক্ত সুন্দর নগরী হিসেবে ফিরিয়ে দেয়ার আবেদন জানিয়ে লিখেছেন, ‘তাদের চাওয়া কী, জনগণের সেবা প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত করে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা? ক্লিনিক সিন্ডিকেট করোনার শুরু থেকেই সেবা না দিয়ে, হলি ক্রিসেন্ট নাটক মঞ্চত্ব করে, রোগীর স্বজদের পকেট কেটে যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল তাতে টান পড়েছে বলে তারা এখন মরিয়া। সেবা নাকি গলাকাটা? মানুষ কোনটা বেছে নিবে তা সবাই জানে। দিন ফুরিয়ে এলে আচরণ এরকমই হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত আবেদন, আমাদের দানবমুক্ত সুন্দর নগরী ফিরিয়ে দিন।’
এর আগে গত বছরের ৩০ মার্চ চমেক পরিদর্শনে যাবার শুরু থেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখান মেয়রের অনুসারীরা। সেদিন বিএমএ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী ফেসবুকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন।
ওই দিন হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে নওফেল বের হবার সময় দূরে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সিটি মেয়র আ জ ম নাছিরের নামে স্লোগানসহ বিভিন্ন উস্কানিমূলক শ্লোগান দিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা তৈরির চেষ্টা করেছিল। এসময় নওফেল গাড়িতে বসে হাতের ইশারায় তাদের কাছে আসতে বলেন। কিন্তু তারা না এসে দূরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
এক পর্যায়ে নওফেল গাড়ি থেকে নেমে নিজেই তাদের কাছে যান। এতে দৃশ্যপট পাল্টে যায়, বন্ধ হয়ে যায় স্লোগান। এসময় তিনি নির্বাচনের সময় সহযোগিতার জন্য ছাত্রলীগ কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। পরে নওফেল গাড়িতে উঠে চলে যাওয়ার সময় তারা আবারো আ জ ম নাছির এর নামে স্লোগান দিতে শুরু করে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













