২৯ অক্টোবর ২০২৫

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচার করতেন ফটিকছড়ির আজম খান

বাংলাধারা প্রতিবেদন »  

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের নারী ও মানব পাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা আজম খান ওরফে ডন আজম। চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হাতাতেন মোটা অংকের টাকা, করতেন নারী পাচার। দুবাইয়ে নিয়ে নারীদের উপর চালাতেন অমানবিক নির্যাতন। নারীদের বাধ্য করতেন পতিতাবৃত্তি করতে।

জানা গেছে, ক্যাডার ওসমান বাহিনীর হাত ধরে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন আজম। বাংলাদেশ থেকে আমিরাত পর্যন্ত ছিল তার নারী পাচারের বিস্তৃত সিন্ডিকেট।

সম্প্রতি নারী পাচার করতো এমন একটি চক্রের গডফাদারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একটি দল।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আজম খান ও তার দুই সহযোগী আল আমিন হোসেন ডায়মন্ড এবং আনোয়ার হোসেন ময়না।

এরমধ্যে আজম খানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়িতে। তার বাবা দুবাইয়ে থাকতেন। তিনি ১৯৯৬ সালে দুবাইয়ে চলে যান। দুবাইয়ে তার চারটি তারকাযুক্ত হোটেলের অংশীদার রয়েছে। হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরচুন পার্ল হোটেল এন্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড এবং হোটেল সিটি টাওয়ার। তিনি (আজম খান) গত আট বছর ধরে নারী পাচারের ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন।

সম্প্রতি সিআইডি ও চট্টগ্রাম পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আজমের উত্থানের চমকপ্রদ তথ্য। আজম খান স্বীকার করেছেন তার অপরাধ। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আজম খানসহ দুজন।

সিআইডির ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, কিছুদিন আগে দুবাই সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে আজম খানের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। পরে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। আজম খান দেশে এসে নতুন পাসপোর্ট তৈরি করে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অন্য কোন দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

ইমতিয়াজ আহমেদ আরও জানায়, আজম খান নারী পাচার চক্রের মূল হোতা। এসব হোটেলগুলোতে কাজের নামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করা অল্পবয়সী সুন্দরী তরুণীদের যৌনকাজে বাধ্য করত। আজম খানের সহযোগী আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ডসহ আরও অনেক ড্যান্স প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণীদের বিদেশে মোটা অংকের বেতনের প্রভোলন দেখাতো। পরে চাহিদামতো এসব তরুণীদের তারা দুবাইয়ে পাচারের ব্যবস্থা করত। সেখানে পৌঁছানোর পর আজম খানের মালিকানাধীন ড্যান্স ক্লাবগুলোতে আটক রেখে চলত যৌন নির্যাতন ও নিপীড়ন। তাদেরকে (ভুক্তভোগী) মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা বললেও তাদেরকে কোন টাকা দেওয়া হতো না। এসব ঘটনায় আসামিদের জড়িত থ্কাার সকল অডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছে সিআইডি। আজম খান গত আট বছরে প্রায় এক হাজার তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে।

ইমতিয়াজ আহমেদ আরও বলেন, আজম খানের বাংলাদেশে ৫০ জনের মত দালাল (ট্রাভেল এজেন্সি) সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। নারীরা দেহ ব্যবসা করতে রাজি না হলে তাদেরকে খেতে না দিয়ে মারধর করে আবার কোন কোন সময়ে তাদেরকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হতো।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশেও আজম খানের বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা। তার বিরুদ্ধে গত ২ জুলাই সিআইডি বাদী হয়ে লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন