বাংলাধারা ডেস্ক »
বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর মারা গেছেন। শনিবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এমআইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শিল্পীর মেয়ে মুনীরা বশীর গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতা নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
৮৮ বছর বয়সী মুর্তজা বশীর দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। এর আগেও তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এবার আর হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরতে পারলেন না তিনি।
চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীরের জন্ম ১৯৩২ সালের ১৭ আগস্ট। তার বাবা প্রখ্যাত জ্ঞানতাপস বহু ভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। দেশের বিমূর্ত চিত্রকলার অন্যতম পথিকৃৎ বশীর ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউটে (এখন চারুকলা) ভর্তি হন। সে সময় ভাষা আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমতলার সেই ঐতিহাসিক মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারির গায়েবানা জানাজাতেও যোগ দিয়েছিলেন। গ্রেফতার-মামলা এড়াতে ওই সময় তাকে পলাতক থাকতে হয় দীর্ঘদিন।
ঢাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু মুর্তজা বশীরের। পরে ইতালিতে চিত্রকলার ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে লন্ডন হয়ে দেশে ফেরেন। ১৯৭৩ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। একসময় বিভাগের চেয়ারম্যান হন। ১৯৯৮ সালে অবসর নেন শিক্ষকতা থেকে।
মুর্তজা বশীরের প্রথম একক প্রদর্শনী হয় ইতালির ফ্লোরেন্সে, ১৯৫৮ সালে। ‘লা পার্মানেন্ট’ গ্যালারির সেই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল তার ফ্লোরেন্সে অবস্থানকালীন আঁকা চৌদ্দটি তৈলচিত্র। ওই বছরই ইতালির শিল্পী রাপিসার্দি ও ভাস্কর ম্যাডোনিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ‘মুভিমেন্টো প্রিমোরডিও’ (আদিমতার আন্দোলন) নামে একটি শিল্পীগোষ্ঠী গড়ে তোলেন এবং এম্পোলি শহরে গ্রুপ প্রদর্শনী করেন।
‘দেয়াল’, ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’ ছাড়াও বেশকিছু উল্লেখযোগ্য চিত্রমালা রয়েছে মুর্তজা বশীরের। ‘লিনোকাট’ মাধ্যমে তার ভাষা আন্দোলন নিয়ে ‘রক্তাক্ত ২১শে’ একটি বিখ্যাত কাজ। পেইন্টিং ছাড়াও ম্যুরাল, ছাপচিত্রসহ চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমে অবাধ বিচরণ ছিল তার। মুদ্রা ও শিলালিপি নিয়েও তিনি গবেষণা করেছেন। ছবি আঁকার পাশাপাশি কবিতা লিখেছেন মুর্তজা বশীর। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা উপন্যাস ‘আলট্রামেরিন’। চিত্রকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে একুশে পদক পান মুর্তজা বশীর। গত বছর সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













