সম্পাদকীয় »
করোনাকালের শুরু থেকেই যেন একের পর এক দুঃসংবাদ। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল। এরমধ্যে ছিল সুপার সাইক্লোন আম্পান। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো আরও একটি দুর্ঘটনা। সেটি হলো নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণ। এ বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে এখন পর্যন্ত ২৪ ধর্মপ্রাণ মুসল্লির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে।
শুক্রবার রাত পৌনে নয়টার দিকে দোতলা মসজিদটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুসল্লিদের দাবি, মসজিদটিতে দুই থেকে আড়াইশ মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু এশার নামাজের সময় স্বাভাবিক কারণেই মুসল্লির সংখ্যা কম থাকে। এমনিতেই মুসল্লি কম, তার ওপর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করছিলেন। সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ মুসল্লি ছিলেন।
এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ আদায় করার পর অনেক মুসল্লি চলে যান। এর পর যে যার মতো সুন্নত ও বেতের নামাজ আদায় করছিলেন। ঠিক তখনই বিকট শব্দে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। এতে ৪০ জনের মতো দগ্ধ হন। তারমধ্যে ৩৭ জনকে রাতেই পোড়া রোগীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এলাকা স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠছে। এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণের ঘটনায় ২৪ জন মারা গেছেন। এখনও অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিস্ফোরণে মসজিদের ভেতর আগুন জ্বলে উঠে এবং কাঁচ ভেঙে মুসল্লিরা আহত হয়। দগ্ধদের বাঁচাতে লড়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ডাক্তার-নার্সরা। মসজিদের ভেতরের ৬টি এসি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। ২৫টি সিলিং ফ্যানের পাখা বাঁকা হয়ে গেছে।
প্রাথমিকভাবে মসজিদের এসি থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে ধারণা করা হলেও পরে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস পাইপ লিকেজের কারণে বিস্ফোরণ ঘটে। উদ্বেগের বিষয়, মসজিদের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় ইউটিলিটি নিরাপত্তা না থাকলে আর কোথায় সবকিছু নিরাপদ ও আশঙ্কামুক্ত থাকবে?
জানা যায়, তল্লা মসজিদ এলাকায় তিতাস গ্যাসের লিকেজ ছিল এবং এ সম্পর্কে একাধিকবার তিতাস কর্তৃপক্ষকে জানানোও হয়েছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।
দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তব সত্য যে, এদেশে যেকোন দুর্ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যতটা তৎপর হয়ে ওঠে, দুর্ঘটনার আগে তেমনটা দেখা যায় না।
এখানেও স্থানীয়রা গণমাধ্যমকে যেসব তথ্য দিয়েছেন তা রীতিমত গতানুগতিক। ওই মসজিদের নিচে দিয়ে যাওয়া গ্যাসের পাইপ লিকেজের কথা আগে জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ। এই দায়িত্বহীনতার কারণেই এমন দুর্ঘটনা আর এত প্রাণহানি।
মসজিদে বিস্ফোরণ কেন হলো, তা তদন্তে ইতোমধ্যে একাধিক কমিটি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ হয়তো এসব কমিটি খুঁজে বের করবে। সঙ্গে থাকতে পারে কিছু সুপারিশ। কিন্তু আগের মতো সেসব সুপারিশ ফাইলবন্দী থাকবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটলো তার প্রকৃত কারণ জেনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যতে কোথাও যেন এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা না ঘটে তা-ও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না।
এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের গভীর শোক ও সমবেদনা। আর আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। একইসঙ্গে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হতে আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
বাংলাধারা/এফএস/এএ













