৩ নভেম্বর ২০২৫

সিন্ডিকেট করে বরফের দাম বৃদ্ধি; প্রতিবাদে মাছ বেচাকেনা বন্ধ

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

সিন্ডিকেট করে বরফের দাম বৃদ্ধি করার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য মাছ বেচাকেনা বন্ধ ঘোষণা করেছেন কক্সবাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মৎস্য ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু করে দুপুর পর্যন্ত চলা কর্মসূচীতে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা।

সমাবেশে জানানো হয়, অতি মুনাফালোভী মিল মালিকদের কারণে বরফ নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন কক্সবাজারের ফিশারিঘাটের মাছ ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন খরচ প্রায় একই থাকলেও পূর্বের ৫০-১০০ টাকার এক পিস বরফ কিছুদিন ধরে চারগুণ বাড়ানো দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে কেনা ছাড়া অন্যস্থান থেকেও কোন বরফ আনতে দেয়া হচ্ছে না। ৬ নম্বর জেটি ঘাট ও ফিশারিঘাট এলাকার বেশ কিছু বরফ মালিক সরকারি দলের সাথে যুক্ত থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দাপট খাটানো হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ ও ক্ষুব্দ ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদে বরফ কেনা বন্ধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করছে। বন্ধ রয়েছে মাছ বেচাকেনা। এতে সাগর থেকে আহরিত মাছ নিয়ে ঘাটে ফেরা ট্রলার মালিকরা চরম বেকায়দায় পড়েছেন। কোন ব্যবসায়ী মাছ কেনাবেচা না করায় ট্রলার থেকে মাছ নামাতে পারছেন না। ফলে অনেক ট্রলারে মাছ পঁচে যাচ্ছে বলে দাবি ট্রলার মালিকদের।

বিক্ষোভ কর্মসূচীতে আরো অভিযোগ করা হয়, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বরফ খুবই নিম্নমানের। ওজনেও কম। সময় মতো পাওয়া যায় না যোগান। এরপরও মালিকদের সিন্ডিকেটে জিম্মি হয়ে পড়েছে ফিশিংবোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সঠিক সময়ে বরফের যোগান না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী। ক্ষতি পোষাতে না পেরে অনেকে ব্যবসা বন্ধ রেখেছে। যারা ব্যবসায় আছে তারাও লোকসান গুনে চলছে। সব মিলিয়ে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের ‘মন্দার দিন’ চলছে। আর অধিক মুনাফায় ফুলছে বরফকল মালিকেরা।

জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, ১৫০ টাকার বরফ ৫০০ টাকায় কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। বরফের ঘাটতি পূরণে বাইর থেকে আনতে গেলেও বাধা দেয়া হয়। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত বরফ আকারে বড় হলেও ভেতরে পুরো ফাঁকা। ওজনে ঠকানোর কারণে এ বরফ কিনে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চাঁদপুর, খুলনা, মহিপুর থেকে বরফ কিনে আনছে ব্যবসায়ীরা। তাতেও বাধা অসাধু বরফকল মালিকদের। এ কারণে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ কর্মসূচী চলছে।

তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি বরফের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আহরিত ইলিশ মাছ। আহরিত মাছ নিয়ে অনেক ট্রলার কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এলেও মাছ আনলোড করতে না পেরে দাদন নিয়ে সাগরে যাওয়া ট্রলার মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

সভায় জানানো হয়, কক্সবাজারে ১৭ টির মতো বরফকল রয়েছে। যেখানে ২০ থেকে ২৪ কেজি ওজনের এক হাজার ২০০ পিস মতো বরফ উৎপাদন হয়। অথচ, ভরা মৌসুমে কক্সবাজারে ২ হাজার পিস বরফের চাহিদা। সংকটেও বাইর থেকে বরফ কিনে আনতে গেলে বাধার সম্মুখীন হয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম চিশতি, সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম বাশি, জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু, সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পুতু, ব্যবসায়ী নেতা নাসির উদ্দিন বাচ্চু।

বক্তাদের মতে, একটি বরফ তৈরিতে খরচ হয় ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা। ১০০ টাকায় বরফ বিক্রি করলেও স্বাভাবিক হতো। কিন্তু এখন মালিকেরা সিন্ডিকেট করে সেই বরফ বিক্রি করছে ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। এতে মাছ মজুদে বরফেই খরচ হচ্ছে বিপুল টাকা। ফলে লাভের বিপরীতে লোকসান গুণতে হচ্ছে মৎস্য ব্যবসায়ীদের। তাই ফিশারী ঘাটে সব ধরণে মাছ বেচাকেনা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি সন্তোষজনক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত একটি মাছও ক্রয়-বিক্রয় হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি ও কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দসহ সকল মৎস্য ব্যবসায়ীরা এতে উপস্থিত ছিলেন। মৎস্য অফিসের সাথে স্থানীয় বোট মালিক ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয় না থাকাকেও এ বিশৃঙ্খলার জন্য দায়ী বলে মনে করেন বোদ্ধা মহল।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) কক্সবাজার কেন্দ্রের প্রধান মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিক্ষোভকারিরা আমার চেম্বারে এসেছিলেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই এর সুষ্ঠু একটি সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাধারা/এফএস/এএ

আরও পড়ুন