২ নভেম্বর ২০২৫

ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে ক্লিয়ারেন্স পারমিট (সিপি) জালিয়াতি ; ব্যবস্থা নিচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টমস

বাংলাধারা প্রতিবেদন »

চট্টগ্রাম বন্দরে ভয়াবহ এক জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নকল ছাড়পত্র দিয়ে সেই চালান খালাসের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ঢাকার একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির নাম মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ। কাস্টমসের কর্মকর্তার বুদ্ধিমত্তার কারণে ছাড়ের আগেই সেটি ধরা পড়ল।

কাস্টমস সূত্র জানায়, মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ চলতি বছরের এপ্রিলে ১৩ হাজার ৫২০ কেজি চীনাবাদাম ও ৪ হাজার ৫১০ কেজি ওলিভ ওয়েল আমদানির ঘোষণা দিয়ে মালয়েশিয়া থেকে চালানটি নিয়ে আসে। ২৩ এপ্রিল তাদের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের খান এন্টারপ্রাইজ চালানটি খালাসের জন্য কাস্টমস হাউসে বিল অব অ্যান্ট্রি দাখিল করে। কিন্তু সন্দেহজনক পণ্যের উপস্থিতির তথ্য থাকায় কাস্টমসের এআরআই শাখা চালানটির খালাস স্থগিত করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করে।

কায়িক পরীক্ষায় দেখা যায়, ঘোষণা দেওয়া পণ্যের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ শুল্কের ২১ হাজার ৬০ কেজি শিশুখাদ্য গুঁড়োদুধ নিয়ে এসেছে। পরে এ ঘটনায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মিথ্যা ঘোষণার অপরাধে আমদানিকারককে মোট ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করে। পাশাপাশি জরিমানা দিয়ে খালাস করতে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ক্লিয়ারেন্স পারমিট’ বা ছাড়পত্র নেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এখানেও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজ। ১১ অক্টোবর আমদানিকারক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নকল ক্লিয়ারেন্স পারমিট কাস্টমসে দাখিল করে। এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের আদলে একটি ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি করে। পরে ওই নকল ছাড়পত্রে তৈরি করা সেই ভুয়া ওয়েবসাইটের ঠিকানাও লিখে দেয়।

কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট গ্রুপের সহকারী কমিশনার সানজিদা অনুসূয়ার কাছে সিপির কপি দেখে সন্দেহ হয়। কারণ এপ্রিল মাসে চালান দুটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে তিনি আটক করেন। পরে বিষয়টি জানতে তিনি সরাসরি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের কাছে ফোন দেন এবং নিশ্চিত হন, মন্ত্রণালয়ের সিপি সিল স্বাক্ষর সবই ভুয়া।

কাস্টমসের সহকারী কমিশনার সানজিদা অনুসূয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এপ্রিল মাসে আমি মিথ্যা ঘোষণায় আনা চালান দুটি আটক করে সিয়াম এন্টারপ্রাইজকে জরিমানাসহ শুল্ক আরোপ করি। আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য কিভাবে সিপি পেল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফোন করি এবং নিশ্চিত হই বিষয়টি ভুয়া। এরপর আমি ওয়েবসাইট চেক করতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের সঙ্গে হুবহু মিল রেখে শুধু একটি ডট না দিয়ে বড় ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। এমনিতেই আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে, এখন বড় ধরনের জালিয়াতি করে ফৌজদারি অপরাধ করল। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এ বিষয়ে জানতে আমদানিকারক সিয়াম এন্টারপ্রাইজের মালিকের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। আমদানিকারকের নিয়োজিত যে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এই ভুয়া সিপি কাস্টম হাউসে জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘খান এন্টারপ্রাইজ’। সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক গোলাম মাওলা খানের বাড়ি সিরাজগঞ্জে, তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতা। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলকায় এই প্রতিষ্ঠানটির অফিস। সোমবার বিকেলে গোলাম মাওলা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ধরনের ভুয়া জালিয়াতির ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আসল আমদানিকারকরা। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। এ ঘটনার পর কাস্টম কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই পণ্য আমদানিতে আরো কড়াকড়ি করবে। এর ফলে  আমদানিকারকরা বাড়তি ভোগান্তিতে পড়বেন। আমরা চাই এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় এমন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

কাস্টমস নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, নকল ওয়েবসাইটটির ডোমেইনে নামের বানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটের নামের বানানের মতোই। পার্থক্য ছিলো শুধু একটি ডট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকৃত ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস (minicom.gov.bd)। অন্যদিকে ভুয়া ওয়েবসাইটির অ্যাড্রেস (minicomgov.bd)। এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করে সেখানে সিপির কপি যুক্ত করেছে আমদানিকারক।

উল্লেখ্য,  সিপি হচ্ছে  আমদানি নিয়ন্ত্রকের অফিস হতে ইস্যুকৃত আমদানি পন্য খালাসের ছাড়পত্র বা ক্লিয়ারেন্স পারমিট। সাধারণ আমদানি নীতি আদেশের বিধি-ভঙ্গ করে কোন পন্য আমদানি হয়ে থাকলে  এবং ঐ পন্য কাস্টমস কতৃপক্ষ ছাড় দেয়ার সুযোগ না থাকলে, আমদানিকারক ঐ পন্য চালান খালাস দেয়ার জন্য প্রধান নিয়ন্ত্রক (আমদানি ও রপ্তানি) নিকট  আবেদন করবেন। আবেদন যাচাইয়ান্তে প্রধান নিয়ন্ত্রক এর দপ্তর চালান খালাসের জন্য সিপি (ক্লিয়ারেন্স পারমিট) ইস্যু করতে পারেন।

এ জাতীয় পন্য চালান আমদানি হলে চালান খালাস না দিয়ে আমদানি নীতি আদেশ ভঙ্গের দায়ে কারণ দর্শানো নোটিশ জারী করা হয়। যে ক্ষেত্রে আমদানিকারকের আবেদন বিবেচনায় নিয়ে সিপি ইস্যু করা হয়। সিপি (ক্লিয়ারেন্স পারমিট) তে প্রায়শই চালান কন্ট্রাভেনশন পদ্ধতিতে খালাস দেয়ার কথা উল্লেখ থাকে, সেক্ষেত্রে ফাইন, প্যানাল্টি দিয়ে পন্য চালান খালাস দিতে হয়।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ