৩১ অক্টোবর ২০২৫

নতুন বছরের শুরুতেই উদ্বোধন হবে ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি »

পার্বত্য খাগড়াছড়ির সাবেক মহকুমা শহর সীমান্তঘেঁষা রামগড়ে ফেনী নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মান কাজ শেষ হওয়ার পথে। ২০১৭ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করে ২০২০ সালের এপ্রিলে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বৈশ্বিক মহামারিতে নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়ে আগামী ৫ জানুয়ারীর মধ্যে শেষ হবে এর নির্মান কাজ। নির্মান কাজ শেষ হলে নতুন বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী রামগড়ে ফেনী নদীর উপর নির্মিত স্বপ্নের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু উদ্বোধন করবেন।

স্বপ্নের মৈত্রী সেতু নির্মাণ হওয়ার পরপরই বহুল কাঙ্খিত বাংলাদেশের রামগড়ে স্থলবন্দরের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০ একর ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে। স্থলবন্দর নির্মিত হলে গতিশীল হবে পাহাড়ের অর্থনীতি। রামগড়ে স্থলবন্দরটি চালু হলে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, কর্মসংস্থান, আমদানি-রফতানিসহ অর্থনীতর নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি হবে দেশের ১৫তম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম স্থলবন্দর। এদিকে ভারত সরকার দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে তাদের সেভেন সিস্টারখ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের গেটওয়ে হিসেবে দেখছেন রামগড় স্থলবন্দরকে।

ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনপফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত¦াবধানে ৮২ দশমিক ৫৭ কোটি রুপি ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের দুই লেন বিশিষ্ট এক্সট্রা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে। ১২টি পিলার সম্বলিত স্বপ্নের মৈত্রী সেতুটির বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি পিলার। এছাড়াও স্প্যান রয়েছে ১১টি। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে সাতটি ও ভারত অংশে ৪টি। নদীর অংশে ৮০ মিটারের স্প্যান এবং নদীর দুই পাড়ের ৫০ মিটারের দুটিসহ মোট ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ তিনটি স্প্যানই হচ্ছে মেইন স্প্যান।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে গেল ১৮ আগস্ট ২০২০ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে হেয়াকে-বারৈয়াইয়ারহাট সড়কের জন্য ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটিতে সরকার দেবে ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যে রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কের বেশ কয়েকটি দুই লেন বিশিষ্ট ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে।

রামগড় পৌরসভার মেয়র কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান রিপন বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশের সীমান্তবাসীরা আশার আলো দেখছেন। দ্রæত স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মান হলে বাড়বে ব্যবসা-বানিজ্যসহ কর্মসংস্থান।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাব্রæম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধা, যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর করা এবং আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির ভিত্তি প্রস্থর ফলক উন্মোচন করেন। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, রামগড় স্হলবন্দরের মৈএী সেতু উদ্বোধনের পর ভারত-বাংলাদেশ দু দেশের অর্থনৈতি অবস্হা বদলে যাবে। মানুষের কর্মসংস্হান সৃষ্টি হবে পন্য আমদানি-রফতানি মাধ্যমে অর্থনৈতি উন্নয়নের নতুন দ্বার উম্মোচিত হবে।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন