আলমগীর মানিক »
রাঙামাটির ঘাগড়া এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার (৭ই জানুয়ারী) বিকেলে অর্ধগলিত এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ময়না তদন্ত শেষে খুনির পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এরপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই খুনিকে গ্রেফতার করেছে কাউখালী থানা পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত খুনি একজন ট্রাক ড্রাইভার। তার নাম আবুল খায়ের(৪৯)। আবুল রাঙ্গুনীয়া উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সোনারগাঁও রাস্তার মাথা এলাকার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে।
কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদ উল্লাহ-পিপিএম গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, রাতেই তাকে চট্টগ্রামের বায়েজীদ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে কাউখালী থানা পুলিশের একটি টিম ঘাগড়া এলাকা থেকে অর্ধগলিত এক নারীর লাশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, বিকাশের টাকা উত্তোলন ও মেয়ের ঔষধ আনতে গিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন উক্ত নারী। তার নাম রেহেনা পারভীন (৩৭)।
রেহেনা হাটহাজারী উপজেলার ইছাপুর এলাকার প্রবাসী জনৈক সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তার বাড়ী হাটহাজারীর ইছাপুরে হলেও দু’মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন হাশেম বাজার মসজিদ সংলগ্ন ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে এসে তার মায়ের লাশ শনাক্ত করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত জানান।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাউখালী থানার ওসি মো. শহীদ উল্ল্যাহ-পিপিএম ও এসআই মো. আব্দুস সালামের নের্তৃত্বে পুলিশের একটি টিম রাত সাড়ে দশটায় রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর এলাকা থেকে ঘাতক আবুল খায়েরকে গ্রেফতার করে কাউখালী থানায় নিয়ে আসে।
কাউখালী থানা পুলিশ হেফাজতে ট্রাক ড্রাইভার আবুল খায়ের জানায়, নিহত রেহেনা পারভীনের সাথে প্রায় ৪/৫ বছর যাবত তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। রেহেনা পারভীনের স্বামী প্রবাসে থাকার সুবাধে তাদের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো এবং পরিবারের ঘর ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ সে নিজেই বহন করতো।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার রেহেনা পারভীনের বাসায় গিয়ে অন্য পুরুষের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে বিষয়টি মেনে নিতে পারছিলেন না আবুল খায়ের। পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করার। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১ জানুয়ারী ঢাকা থেকে ট্রাক যোগে কয়লা নিয়ে রাঙ্গুনিয়ার মগাছড়িস্থ ইটভাটাতে আসার সময় রেহেনা পারভীনকে ফোন করে টাকা দেয়ার কথা বলে ডেকে নেয়।
রেহেনা পারভীন তার ফোন পেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসলে তাকে ট্রাকের কেবিনে রাঙামাটির পর্যটন রিসোটে নিয়ে আসবে বলে। পথিমধ্যে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এসে রাত সারে নয়টায় ট্রাক থামিয়ে রেহেনা পারভীনকে মাফলার দিয়ে পেছিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ট্রাকে থাকা কাপড় দিয়ে ডেকে কেবিনের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।
রাত সাড়ে দশটায় ঢাকা থেকে নিয়ে আসা কয়লা ইটের ভাটায় আনলোড করে গভীর রাতে ঘাগড়াস্থ সিটিহাট পুলিশ ফাঁড়ি থেকে প্রায় ২শত গজ পশ্চিমে বনের ভেতরে রেহেনা পারভীনের লাশটি ফেলে যায়।
শুক্রবার (৯ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাতে কাউখালী থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, এই ঘটনায় নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে এবং গ্রেফতারকৃত ঘাতক ট্রাক ড্রাইভার আবুল খায়েরকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানা পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













