দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু »
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে সরিষা ক্ষেতে মৌ চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন কৃষক দেলোয়ার।
তিনি উপজেলার কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নে এক একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলেন সরিষা ক্ষেত। এর পাশাপাশি বসিয়েছেন মৌ বাক্স। এতে মধু সংগ্রহের পাশাপাশি বেড়েছে সরিষার ফলন।
রবিবার ২৪ জানুয়ারি সরজমিনে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে সারি সারি করে বসানো হয়েছে মৌ চাকের বাক্স।
কৃষক দেলোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, এক একর জায়গায় সরিষার আবাদ করেছেন। পাশাপাশি মধু সংগ্রহের জন্য তিনটি বাক্স বসিয়েছেন। এ পর্যন্ত ২০ কেজি মধু তিনি সংগ্রহ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে গত ২৮ ডিসেম্বর এক একর জায়গায় ৩কেজি সরিষার বীজ বপন করেন। এতে তার খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। বীজ সার উপজেলা কৃষি অফিস দিয়েছেন। পাশাপাশি মধু সংগ্রহের জন্য ২০ হাজার টাকা খরচ করে মৌমাছি ও ৩টি বাক্স ঢাকা থেকে সংগ্রহ করেন তিনি। এ পর্যন্ত ২০ কেজি মধু সংগ্রহ করে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। কোন ধরণের দূর্যোগ না হলে ক্ষেতে প্রায় ১৩-১৪ মন সরিষা পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বোয়ালখালীতে এবার প্রায় ৩০ একর জায়গায় সরিষার আবাদ হয়েছে। সরিষার আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার ও প্রদর্শনী সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সেচ ও অন্যান্য খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। নভেম্বর মাসে এর বীজ বপন করতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.আবুল বশর জানান, মৌ চাষ করে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন । পাশাপাশি মৌমাছি সরিষার পরগায়ণে পরোক্ষ ভাবে সহায়তা করে। প্রতি কেজি সরিষা থেকে ৪শ গ্রাম সরিষা তেল পাওয়া যায়। সরিষার তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান,সরিষা ক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ লাভজনক ব্যবসা হয়ে দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকের একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে অন্যদিকে ক্ষেতে মধু চাষ করায় সরিষার ফলনও হয় বেশি।
কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় চলতি বছরে উপজেলার পৌরসভা, সারোয়াতলি,আমুচিয়া, আহল্লা কড়লডেঙ্গা ইউনিয়নে ৩০ একর জমিতে সরিষা ক্ষেত করা হয়েছে । আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষায় বাম্পার ফলনের পাশাপাশি মধু সংগ্রহ করতে পারবে কৃষক। সরিষা ক্ষেতে মধু চাষে উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আতিক উল্লাহ।
তিনি আরো জানান, সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি থাকলে তা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ ফলন বাড়ে। এতে সরিষার ফুলে মৌমাছি যে পরাগায়ন ঘটায় তাতে সরিষার দানা ভালো হয় এবং ফলনও বাড়ে। যে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি নেই সেখানে সরিষার ফলন কম হয়। সরিষা ক্ষেতে মধুর খামার গড়ে তোলার জন্য আমরা সব সময় কৃষককে উৎসাহ দেই। এর ফলে কৃষক দুদিক থেকে লাভবান হয়। একদিকে সরিষা থেকে যে মধু পাওয়া যাবে তা বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান অন্যদিকে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি থাকায় সরিষার ফলন বেশি।
সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে সরকারি ভাবে কৃষকদের মাঝে সতেনতা সৃষ্টি, পুঁজির যোগান, আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং মধু বিপননের ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান এলাকার কৃষকরা।
বাংলাধারা/এফএস/এইচএফ













