২৫ অক্টোবর ২০২৫

রাঙামাটিবাসীর ভালোবাসায় চির অম্লান হয়ে থাকবে মামুনুর রশিদ

বাংলাধারা প্রতিবেদন  »

তিনি সরকারি বেসরকারি সকল কর্মকান্ড শেষ করে দিনের শেষে আবার এলাকার হতদরিদ্র মেহনতি মানুষের জন্য নিজ উদ্যোগে কাজ করতেন। উন্নয়ন, অবহেলিত জনপথ, শিক্ষা, চিকিৎসা, সংস্কৃতি, তৃণমূল পর্যায়ে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ ও মামলা মোকাদ্দমা বিষয় সমস্যার সমাধান করে দিতেন। প্রতিদিন তো আর্থিক সহায়তা আছেই। এছাড়া সপ্তাহের প্রতি বুধবার তিনি জেলার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। গণশুনানির মাধ্যমে সেলাই মেশিন বিতরণ, ফ্রি ওষধ বিতরণ ও বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই বিতরণসহ নগদ অর্থ প্রদান করতেন।

বলছি সদ্য বিদায়ী রাঙামাটির জেলা প্রশাসক অনেক গুণে গুণান্বিত এ কে এম মামুনুর রশিদ এর কথা। যিনি জেলার উন্নয়নে নিজের সর্বোচ্চটুকু বিলিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কখন যে দুপুরের খাবার খাওয়ার সময়টুকু অতিবাহিত করে ফেলতেন সেদিকে অনেক সময়ই তার খেয়ালই থাকতো না। হোটেল থেকে নয়তো বাসা থেকে আনা রান্না করা খাবার অফিসিয়াল চেয়ারেই বসেই সেরে ফেলতেন। এরপর সেই চেয়ারটিতেই সামান্য হেলান দিয়ে হয়তো আধা ঘন্টা সময় একটু জিরিয়ে নিতেন। ফের শুরু করতেন জেলা উপজেলার সকল সরকারী ফাইলগুলো সম্পর্কে তথ্য আহরণ ও সই বিতরণ। এরই মধ্যে তার দরবারে বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ আর অনুযোগ নিয়ে হাজির হওয়া মানুষগুলোকে হাসিমুখেই ডেকে নিয়ে শুনতেন তাদের হৃদয়ের আঁকুতি। সম্ভবপর করনীয় উপকারটুকু সাথে সাথেই সম্পন্ন করে দিতেন নয়তো দরখাস্তটি নিজেই গ্রহণ করে সহকারিকে পরবর্তী যথাসময়ে কাজটি করে দিতে নির্দেশনা দিয়ে দিতেন।

রাঙামাটির মানুষের চোখে, মামুনুর রশিদের অনেকগুলো গুণের মধ্যে বড় গুণহলো- তিনি মানুষকে ছোট করে দেখেননা। অবহেলাও করেননা। তিনি মানুষের উপকারে আসেন অতিসহজে। অনেকে মামুনুর রশিদকে মানবতার ডিসি ও শিক্ষানুরাগী ডিসি বলেও ডাকতেন। তিনি রাঙামাটি জেলার ১০ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতেন কোথায় অবহেলিত, কোথায় উন্নয়ন দরকার, কোথায় স্কুল কলেজ নাই, কোথায় যাতায়াতের সমস্যা। তিনি কখনো পাহাড়ি বাঙালি ভেদাভেদ করেননি। মামুনুর রশিদ তার সহকর্মীদের প্রতিও ছিলেন খুবই আন্তরিক।

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় রাঙামাটির বিভিন্ন প্রান্তের অসহায় দরিদ্র মানুষজনের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে মনে স্থান করে নিয়েছেন এই মামুনুর রশিদ। পিছিয়ে পড়া রাঙামাটিবাসীর উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাওয়া এই জেলা প্রশাসক সম্পর্কে সম্প্রতি বেশ চমকপ্রদ তথ্য মিলেছে। যার ফলে রাঙামাটির মানুষের ভালবাসা ও শ্রদ্ধা মামুনুর রশিদ অম্লান হয়ে থাকবে চিরদিন।

বিদায় বেলায় মামুনুর রশিদ বলেছেন, জনগণের সেবা করার লক্ষ্যেই সরকার আমাকে অত্র জেলায় পাঠিয়েছিলেন। সামান্য কয়দিনের জন্য এই জেলায় আমি দায়িত্ব নিয়ে এসেছিলাম। এই কথাটি মাথায় রেখেই আমি চেষ্ঠা করেছি যাতে জনগণ তাদের ন্যায্য প্রাপ্যটাও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পায়। আমার পরিবার থাকে ঢাকায়; আমি এখানে আমার বাসভবনে গিয়ে একা যে সময়টুকু নষ্ট হবে সেটি যদি আমি রাঙামাটির মঙ্গলে কাজে লাগাতে পারি তাহলে আমার এই ত্যাগের বিনিময়ে অত্রাঞ্চলের বাসিন্দারা সামান্যতম হলেও এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করতাম। জানিনা কতটুকু আমার দায়িত্ব পূরণ করতে পেরেছি। আমি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি এই এলাকার গরিব অসহায় হতদরিদ্র লোকদের কিছু দিয়ে যেতে। তবে উন্নয়ন করার স্বাদ ছিলো তেমন স্বাধ্য ছিলোনা। কারণ আমার বরাদ্দ সীমিত। তার পরও যথাযথ চেষ্টা করেছি গরিব অসহায় মানুষদের পাশে থাকতে। তবে এই এলাকার বৃত্তশালীদের আরো সহযোগিতা পেলে উন্নয়ন করা সহজতর হতো। যাই-হোক, রাঙামাটিবাসী থেকে আমি প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছি। এসব চিরদিন আমার হৃদয়ে গেঁথে থাকবে।

মামুনুর রশিদ বলেন, গত তিন বছর রাঙামাটি জেলার যে দায়িত্ব পালন করেছি তা ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দায়িত্ব পালন। রাঙামাটির প্রতিটি মানুষ যেন আমার নিজ আপন জন। সকল কর্মকর্তা- কর্মচারী ও রাঙামাটি জেলার সকল সংবাদকর্মীদের সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে আমি একটি ভালো সময় রাঙামাটিতে পার করতে পেরেছি। আগামী দিন গুলোতে রাঙামাটি জেলাবাসীর জন্য আমার মনের দুয়ার সব সময় খোলা থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ৬ মার্চ ২০১৮ রাঙামাটি জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করেন এ কে এম মামুনুর রশিদ। তবে গত ২৮ জানুয়ারী বর্তমান জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। তাই গতকাল সোমবার (১লা মার্চ) রাঙামাটি জেলার নতুন জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন