২৯ অক্টোবর ২০২৫

একজন আত্মত্যাগী প্রাণী প্রেমির গল্প!

বাংলাধারা ডেস্ক »

১০ বছর আগে জাপানের ফুকুসিমায় ঘটেছিল ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনা। সেখানে একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট বিধ্বস্ত হয়েছিল সুনামি ও ভুমিকম্পের কারণে। স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে ওই এলাকায় আর জনবসতি রাখা হয়নি। দেড় লাখেরও বেশি মানুষকে ফুকুসিমা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।

জনবসতি তো নেই, নেই কোনো মানুষের চিহ্ন, বিস্পোরণের রেডিয়েশন আছে এমন একটি স্থানে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই রয়ে গেছেন একজন আত্মত্যাগী মানুষ। তার নাম সাকায় কাটো। ভুমিকম্প আর নিউক্লিয়ার প্লান্টের বিষ্পোরণের পর তার প্রতিবেশি ও পরিবারও পালিয়ে যান। কিন্তু সেখানে রয়ে যান কাটো। কারণ, তিনি সেখান থেকে চলে যাওয়া প্রতিবেশিদের পোষা প্রাণীদের রক্ষার জন্য।

প্রথমে শখে এই কাজ করলেও এখন দায়িত্ব নিয়েই দেখাশোনা করছেন ৪১টি বিড়ালের। এই ৪১টি বিড়াল নিয়ে তিনি থাকেন ফুকুসিমা একটি দোতলা ভবনে। ভবনটি মেরামত করাও সম্ভব হয়নি। ভবনে নেই পানির ব্যবস্থাও। আশপাশের লেক ও পর্বতের ঝরনা থেকে বোতল ব্যবহার করে পানি নিয়ে আসেন কাটো। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এলাকার বাইরে গিয়ে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে হয় তাকে।

এই বাড়িতে ঘুমানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই এবাড়ি থেকে দুই ঘণ্টা দূরত্বে ফুকুসিমা শহরের বাসায় গিয়ে ‍ঘুমাতে হয় তাকে। তবে সংরক্ষিত এলাকায় কর্মরত কর্তাদের অনুমতি নিয়েই এ এলাকায় প্রবেশ করতে হয় তাকে।

কাটো জানান, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করেন তাতে। কেন তিনি এত কষ্ট করে এই এলাকায় থাকেন? উত্তরে তিনি জানান, এখানে আছেন উদ্বাস্তু বিলালগুলোর দেখাশোনা করার জন্য।

তিনি বলেন, প্রতিটি জীবনই মূল্যবান। অনেকে তাকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু উত্তরে তিনি তাদের জানান, আমি যদি মরেও যাই, তবে এই এলাকায় মরতে চাই।

কাটো আরও জানান, তার এই কর্মকাণ্ডে তিনি বিরক্ত। কারণ, তার ছোট্ট ব্যবসার লাভের টাকায় বেড়ালের ওষুধ ও খাবার কিনেন। মাঝে মাঝে সঞ্চও শেষ হয়ে যায়। বছর বছর তাদের ক্ষতিপুরণ দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। মাঝে মাঝে সেই ক্ষতিপূরণের টাকাও শেষ হয়ে যায়।

কাটো জানান, উদ্বাস্তু বিড়ালদের চিকিৎসা, ওষুধ, খাবার ও ব্যবহৃত গাড়ির খরচ হয় মাসে সাত হাজার ডলার। তিনি জানান, এই দশ বছরে তিনি সাত লাখ ৫০ হাজার ডলার খরচ করেছেন।

এমনকি প্রতিবেশিদের ফেলে যাওয়া বন্য শুকুরও দেখাশোনা করছেন তিনি।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন