মাবিয়া নওশীন »
শ্রদ্ধা, ভালোবাসা উদযাপনের মাধ্যমেই প্রতি বছর ৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস পালিত হয়। এই দিনে নাগরিক বা সচেতন মহলে নারীদের নিয়ে দু-চার কথার আয়োজন হয়। নারী দিবসে নারীদের যাবতীয় বিষয়গুলো তুলে ধরে কতক সমাজযোদ্ধা—নারী মানে মা, নারী মানে বোন, নারী মানে প্রেয়সী, নারী মানে বিরঙ্গনা, কখনো বা মোনালিসার রূপাশ্রিত ললনা, আবার একুশ শতকের অতি সাধারণ নারী ইত্যাকার শব্দ বুনন। দিনটি হয়ে উঠে নারীময়! নারীদের অধিকার আদায়ের বুলিতে মঞ্চায়ন হয় সাবলীল বহু নাটক, বক্তার মনোরম শব্দাচার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীদের জন্য নিবেদিত একটা গোটা দিন। তাই শুধু একদিনের জন্য হলেও আমরা স্মরণ করি বিশ্বের অগণিত নারীকে। স্মরণ করি স্মরণীয় মায়েদের জীবনের গল্প অথবা লাঞ্চিত নারীদের জন্য দু’ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন।
কিন্তু বাকি দিন গুলোতে নারী মানে কি দাঁড়ায়? বাসে হেলপারের, ভিড়ের মধ্যে আলতু স্পর্শ! নাকি অবাধ্য যুবকের রগরগে বচন? রাস্তার পাশে নির্যাতিতা, বস্তা বাঁধা লাশটাও ৮ মার্চের করুণ চিৎকার? আজ হিসাব করার সময় এসে গেলো।
প্রত্যক পুরুষের জীবনে এক বা একাধিক নারী থাকে সেটা হতে পারে—মা, বোন, স্ত্রী, তাই প্রতিটি পুরুষের জীবনে নারীর অবদান অনেক বেশী।
বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর নারীদের ক্ষেত্রে এই কথাটি মোটামুটি প্রচলিত রয়েছে, যে নারীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের তুলনায় কিছুটা ‘দুর্বল’ প্রকৃতির হয়। এই দেশের অধিকাংশ পুরুষ এমনকি অধিকাংশ নারীও এই প্রচলিত ধারণাকে বিশ্বাস করেন। কিছু নারী যদি বিশ্বাস না ও করে থাকে তাহলে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাকে ভাবতে বাধ্য করে। যদি সাধারণভাবে সরলীকরণ করে এই বিষয়টা বিশ্লেষণ করা যায় তাহলে শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে উপরের প্রচলিত ধারণাটি হয়ত কিছু ক্ষেত্রে সত্য।
কিন্তু প্রশ্ন হলো এই অসম তুলনার প্রশ্নটি কবে থেকে উত্থিত হলো? তাহলে একজন পুরুষ তো সন্তান ধারণ করতে পারে না। এই প্রশ্নে পুরুষের এটাকে প্রাকৃতিকভাবে ‘অক্ষমতা’ ভাবা হয় না কেন? আসলে এই অসম তুলনার জন্ম দিয়েছে উগ্র পুরুষ শাসিত বিশেষায়িত কিছু সমাজ। পৃথিবীতে অনেক সমাজ রয়েছে যেখানে পুরুষদের থেকে নারীরা শারিরীকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। সেই প্রশ্নটি সামনে আনলে তখন বিষয়টি কিভাবে ব্যাখ্যা করতে চাইবো আমরা যারা এই পুরুষ শাসিত সমাজের প্রতিনিধি? আমরা যারা অতিশয় সভ্য, সুশীলতায় আবিষ্ট তাদের কাছেও কি উত্তর আছে?
এই সমাজগুলো আসলে একজন নারীকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁদের শুধুমাত্র ভোগের বস্তু হিসেবেই চিত্রায়িত করতে চাইনি কি? আর মানসিক সক্ষমতার কথা বললে এটা বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত যে একজন নারী একজন পুরুষের থেকে মানসিকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু প্রতিনিয়ত এই সমাজ নারীদের যেভাবে ‘মানসিক চাপ ও যন্ত্রণার’ মধ্যে রেখে নারীদেরকে ভাবাতে বাধ্য করে যে, তুমি যা কিছুই করো না কেন তুমি পুরুষের থেকে অনেক দুর্বল। ব্যক্তিগতভাবে এই অসম তুলনায় বিশ্বাস করি না।
আমাদের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক শিক্ষা। সেই শিক্ষা শুরু করতে হবে, প্রতিটি পরিবার থেকেই। কারণ একজন মা সন্তানের প্রথম শিক্ষক শিষ্টাচার থেকে শুরু করে সবকিছু তার থেকেই শিখে। এবং একজন মুক্তমনা, শিক্ষিত, রূচিশীল সংগ্রামী আর্দশ মা পারেন তার সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।
প্রতিটি পদক্ষেপে নারীদের হতে হবে সচেতন এবং অনেক বেশী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সত্যিকারের শিক্ষা তথা নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান হয়ে নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
নারীদের নিজ থেকে জাগ্রত হতে হবে। নারীর জাগরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার ইচ্ছার মাধ্যমে। সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে নারীরা প্রত্যক মাধ্যমে আরো বেশী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।
তাই,পরিশেষে সমাজ বাস্তবতায় নিজেকে ও বিবেককে একটা প্রশ্নের উত্তর খোঁজায় ব্যস্ত রাখছি- নারীরাও মানুষ হবে! সমাজে, স্বামীগৃহে।
আজি আমাদের দিন ফিরে আসুক,
শৈল্পিক আবেশে,
নারী আর মাতৃত্বে ভেদহীন সমাজে—
শুধুই মানুষ রূপে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













