৮ ডিসেম্বর ২০২৫

সীতাকুণ্ডে শিব চতুর্দশী মেলার প্রথম দিনে লাখো পূণ্যার্থীর ঢল

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি »

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে তিন দিন (১১ মার্চ-১৩ মার্চ) ব্যাপী শিব চতুর্দশী মেলা শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) মেলার প্রথম দিনে চন্দ্রনাথ ধাম মহাতীর্থে লক্ষাধিক ভক্তের ঢল নামে । তবে সক্রিয় রয়েছে সুযোগ সন্ধানী চাঁদাবাজ চক্রও।
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে টিটু নামক এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন। মেলায় আগত তীর্থ যাত্রী ও তাদের গাড়ি পার্কিংকে জিম্মি করে বিভিন্ন স্থানে ইচ্ছেমত টাকা আদায় করছে ইজারাদাররা। ছিনতাই ও গণহারে পকেট কাটার ঘটনাও ঘটেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে প্রতিবছর ফাল্গুনি চতুর্দশী তিথিতে দেবাধিদেব মহাদেবের (শিব) পূজাকে কেন্দ্র করে এই মেলায় ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তা, সাধু-সন্নাসীসহ ১০-১২ লাখ দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত হয় তীর্থভূমি।

এবার সেই শিব চতুর্দশী তিথি শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ১২ মিনিট থেকে শুক্রবার বিকাল ৩টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। ফলে এ দুই দিনে মেলায় প্রতিবছরের মত কমপক্ষে ৮-১০ লাখ দর্শনার্থীর আগমন হতে পারে।

এদিকে শিব চতুর্দশী তিথিতে পূজা দিতে গত দুই দিনে সীতাকুণ্ডে এসে পৌঁছেছেন লক্ষাধিক পূণ্যার্থী। তবে বিভিন্ন স্থানে হয়রানির শিকার হচ্ছেন তীর্থ যাত্রীরা। বিশেষ করে গাড়ি পার্কিং করার যেসব নির্দ্বিষ্ট পার্কিং স্থাপন করা হয়েছে, সেখানে ইচ্ছেমত টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ।

অন্যদিকে তীর্থের বিভিন্ন অংশের পাহাড়ে যাত্রীদের জিম্মি করে সর্বস্ব ছিনতাই করছে দুস্কৃতিরা। এ অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম রাউজানের দেওয়ানপুর থেকে আসা দর্শনার্থী শান্ত, মাইকেল, বিপ্লব ও টিপু, শিমুল জানান- তারা ১০ জনের একটি দল তীর্থ দর্শনে আসেন। এর মধ্যে ৫ জন পাহাড়ের ভেতরে গেলে অস্ত্রধারী ডাকাতরা তাদের ৩৫শ টাকা, ২টি মোবাইলসহ সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে ছুরিকাঘাত ও মারধর করে আহত করে তাদের। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন টিপু দত্ত (২২)। তাকে আশংকাজনক অবস্থায় চমেকে প্রেরণ করেছেন চিকিৎসকরা।

এসময় চার পকেটমার আটক হয়েছে।

অপরদিকে ছোটদারোগারহাটে অবস্থিত লবনাক্ষ মহাতীর্থে বন বিভাগের নামে গেইট স্থাপন করে তীর্থ যাত্রীদের মন্দিরে যেতে বাধা দিয়ে জনপ্রতি দেড়শ টাকায় টিকিট কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এভাবে মেলাকে কেন্দ্র করে যেখানে ভিড় বেশি সেসব স্থানে গণহারে পকেট কাটা হচ্ছে। ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পূন্যার্থীরা।

চন্দ্রনাথ ধাম মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী জানান, হিন্দুশাস্ত্র মতে দেবাধিদেব মহাদেব বলেছেন কলিকালে আমি চন্দ্রনাথে অবস্থান করব। এই তীর্থ যিনি দর্শন করবেন তার আর পুনর্জন্ম হবে না, তিনি স্বর্গবাসী হবেন। মূলত মহাদেবের এই বাণীকে মনে প্রাণে ধারণ করে সনাতন ধর্মালম্বীরা জীবনে একবারের জন্য হলেও মহাতীর্থ চন্দ্রনাথ ধামে ছুটে আসেন। এখানে পূণ্যস্নান শেষে অর্র্ধ শতাধিক মন্দিরে পূজা অর্চনা, পূর্বপূরুষদের আত্মার শান্তির জন্য শ্রাদ্ধ-তর্পন মধ্য দিয়ে পূণ্য অর্জন করেন।

মেলা কমিটির কার্যকরী সভাপতি সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিল্টন রায় বলেন, হটাৎ করে আবার দেশে করোনা বাড়ছে। এটি মাথায় রেখেই সবাইকে তীর্থ দর্শন করতে হবে এবার। মেলায় তীর্থ যাত্রীদের আনা নেওয়ার সুবিধার্থে প্রতিদিন লোকাল ট্রেন ছাড়াও ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন সীতাকুণ্ডে থেমে যাত্রী আনা নেওয়া করবে। তিনি আশা করছেন কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই মেলা সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হবে। গাড়ি পার্কিংয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের ব্যাপারে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি ।

এদিকে সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি(তদন্ত) সুমন বণিক সাংবাদিকদের বলেন, মেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আড়াইশ পুলিশ সদস্য ছাড়াও মেলা চলাকালীন সমেয়ে র‌্যাব ,আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন