বাংলাধারা প্রতিবেদক >>>
বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনায় শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানাধীন নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শনিবার শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন সেখানে ২০১৬ সালেও পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষে ছয় জন মারা গিয়েছিল।
২০১৬ সালের এপ্রিলে বাঁশখালীর এই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্রামবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত ৬ জনের সবাই স্থানীয় গন্ডামারা ইউনিয়নের বাসিন্দা ছিলেন। এ ঘটনায় প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। নিহত ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় গতকাল শনিবার। বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও কিছু প্রয়োজনীয় দাবী দাওয়া নিয়ে শ্রমিকরা দাবি জানাচ্ছিল। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে পাঁচজন শ্রমিক (মতান্তরে আরও বেশি) মারা যায়, আর আহত হয় দেড়শতাধিক।
এরই মধ্যে এই ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২২ জন শ্রমিকের নাম উল্লেখ করে আরও প্রায় আড়াই হাজার অজ্ঞাত শ্রমিককে আসামী করা হয়েছে।
এই ঘটনায়ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে সহযোগিতা দেওয়া হবে বলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বেতন-ভাতা নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছিল। শনিবার সকালে শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ তাদের নিবৃত করার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের চার সদস্য গুরুতর আহত হয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পাঁচজন নিহত হয়।
সংঘষের্ ঘটনার পর দলে দলে শ্রমিকরা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা ছাড়তে থাকে। সেখানে অনেক শ্রমিক বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছিল, বকেয়া বেতন ও ৮ ঘণ্টা শ্রম নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শ্রমিকরা আন্দোলন করছিল। সেখানে পুলিশ এসে শ্রমিকদের উপর চড়াও হয়, লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
গতবারের মতো এবারও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে থাকা বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। গতবারের ঘটনায় বহিরাগতদের ইন্ধন ছিল বলে উল্লেখ করেছিল তদন্ত কমিটি।
জানা যায়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। জেলা প্রশাসনের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে এবং পুলিশের তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশকে লক্ষ্য করে গতবার পাল্টা গুলিও ছোড়া হয়েছিল। গতবার বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়েছিলেন। এবারও দেড়শতাধিক আহতের মধ্যে পুলিশ আছে প্রায় ১২ জন। গতবার হামলার পর হরতাল ডাকা হয়েছিল। জারি করা হয়েছিল ১৪৪ ধারা।
এবার সেরকম কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। শুক্রবার শুরু হওয়া আন্দোলন শনিবারে সহিংস হয়েছে। নিহত হয়েছেন পাঁচজন। গতবারের সংঘর্ষে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলীর ইন্ধন পেয়েছিল প্রশাসন। এবারের ঘটনা কেন এত বড় হলো তা খুঁজে বের করতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।
উল্লেখ্য, শিল্প গ্রুপ এস আলমের মালিকানায় এসএস পাওয়ার প্ল্যান্ট নামে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক এই তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। চীনের প্রতিষ্ঠান সেফকো থ্রি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এখানে অর্থায়ন করেছে। ৬০০ একর জমির ওপর স্থাপিত এ প্রকল্পে খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
২০১৬ সালের এপ্রিলে সংঘর্ষের আগে বিদ্যুকেন্দ্রটির ভূমি অধিগ্রহণ চলছিল। তা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ছিল অসন্তোষ। তাদের অভিযোগ ছিল, পুনর্বাসনের সুযোগ না দিয়ে জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হলে ইউনিয়নের লবণ ও চিংড়ি চাষে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়বেন বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













