সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
সদ্যগত রমজানের মাঝামাঝি সময় হতে কক্সবাজারে গরমের তীব্রতা যেন কমছে না। গত পক্ষকাল ধরে প্রচন্ড গরমে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে প্রাণিকূল। মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারে। টানা কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৪-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওটা-নামায় রয়েছে। চরম দূর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো।
এদিকে, তাপজনিত রোগের কারণে অনেক পরিবারে চলছে ত্রাহি অবস্থা। দৈনিক গড়ে ৫’শ রোগি চিকিৎসা নিচ্ছে সদর হাসপাতালে। তাপদাহে অতিষ্ঠ জীবন চলছে জেলাজুড়ে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহীন মো. আবদুর রহমান জানান, প্রতিদিনই রোগির ভীড় বাড়ছে। রোগির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগি ভর্তি রয়েছে (বুধবার দুপুর পর্যন্ত) ৫৫৮ জন। যেভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগি আরো বাড়তে পারে।
তিনি আরো জানান, ভর্তি হওয়া রোগির মাঝে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ঠজনিত রোগির সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বরের রোগি ক্রমাগত বাড়ছে। তিনি বলেন, ভাইরাসজনিত জ্বর, ডায়রিয়া, সর্দি-কাঁশি শিশুদের বেশি আক্রমন করছে। এছাড়া হিথস্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
ডা. শাহীন আরো জানান, ভর্তি রোগির পাশাপাশি বৃহস্পতিবার আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন রেকর্ড এক হাজার ২০০ জন রোগি। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩০৪ জন রোগি।
তার মতে, এসব রোগ থেকে রক্ষা পেতে গরমে বিনা কারণে বাইরে না যাওয়া উচিত। এছাড়া পান করতে হবে প্রচুর পরিমানে পানি ও ফলের রস। থাকতে হবে পরিস্কার পরিছন্ন।
রোগির চাপ আরো কয়েকদিন থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরো জানান, সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগি ভর্তি রয়েছেন (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) ৬৮ জন। ধীরে ধীরে কক্সবাজারে করোনা রোগি বৃদ্ধি স্থিতিশীলতা এসেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের অবজারভেশন অফিসার মো. ফরমান আলী জানান, বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবারও ছিলো একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। গরমের তীব্রতা আরো ২/৩ দিন থাকতে পারে। তবে, কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসবে।
কক্সবাজার শহরের ইউনিয়ন হাসপাতালের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, অতিতাপমাত্রার কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি শহরের প্রাইভেট হাসপাতালেও রোগির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিশেষ টীমের ইনচার্জ একেএম আতা এলাহী বলেন, অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা দুর্বিষহ দিন অতিবাহিত করছে। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিও হাসফাঁস করছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্থি নেই।
কক্সবাজার বাচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, একদিকে করোনার কারণে লকডাউন চলছে। তার উপর প্রখর রোদে সাধারণ শ্রমিকদের জীবনের চাকা মন্থর হয়ে আছে। গত কয়েক দিনের অতিরিক্ত তাপমাত্রায় প্রায় ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর পাচ্ছি। দিনমজুর, রিক্সা চালক, খেত-খামারিরা চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) কক্সবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, অতিগরমে গরমে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমনে ডায়রিয়া রোগি বেড়ে যায়। বাড়ে সর্দি ও জ্বর আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। এ সময় পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তরল খাবারের পাশাপাশি রিহাইড্রেশন স্যালাইন খাওয়াতে হবে পরিমাণমতো। গরমে শিশুর ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরের প্রভাব বেশি হয়। শিশুদের এসব রোগ থেকে মুক্ত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













