২৮ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রামে প্রকাশনা ও পুস্তক ব্যবসায়ীদের দুর্দিন

সৈকত জোহা  »

করোনা মহামারির কারণে সারাদেশের মত চট্টগ্রামেও প্রকাশনা ও পুস্তক ব্যবসায়ীরা ভালো নেই। এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের দিন কাটছে চরম অনিশ্চয়তায়। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ সংলগ্ন বইয়ের মার্কেটগুলো চট্টগ্রামের প্রধান বই বিকিকিনি কেন্দ্র। সারি সারি বইয়ের দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো দারুণ সব বই। কিন্তু নেই তেমন কোন ক্রেতা।

রাব্বি বুকস শপের বিক্রয়কর্মী শফি জানান, দোকানে নানা শ্রেণির পাঠকের পদচারনায় মুখর থাকতো সকাল থেকেই। আমরা সব ধরণের বই বিক্রি করে থাকি। করোনার কারণে আমাদের বিক্রি তেমন নেই।

শুধু বইয়ের দোকানগুলো নয়, যে সব প্রতিষ্ঠান সৃজনশীল বই বের করে সেইসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও ভাল না। এই ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি, চট্টগ্রাম জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম একুশে বইমেলা পরিষদের যুগ্ম-সচিব জামাল উদ্দিনের সাথে ।

তিনি বাংলাধারাকে জানান, ‘বলাকা প্রকাশন থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বইমেলায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার বই বিক্রি হত আমাদের। সেই টাকা দিয়ে আমরা সারা বছর মোটামুটি আমাদের খরচের একটা বড় অংশ মেটানো হত। এই বছর বই মেলা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। সবকিছু বন্ধ রেখে বই মেলা করার কোন যৌক্তিকতা ছিল না। ঢাকায় বই মেলায় আমদের খরচ হয়েছিল প্রায় ১লাখ ২০হাজার টাকা আর বই বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬৫০০ টাকার।

আগে আমার ১৭ জন স্টাফ ছিল। এখন আছে ৬ জন। অফিস ভাড়া, গোডাউন, স্টাফের বেতন সহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আমার মাসে প্রায় ১৫০০০০ টাকার মত খরচ হয়। অথচ বই বিক্রি নেই বললেই চলে। আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বই বিক্রি হত আর এখন তা নেমে এসেছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়। রকমারি আর বাতিঘরের মাধ্যমে এখন কিছু বই বিক্রি হচ্ছে কিন্তু তা যৎসামান্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই বই বিক্রি হচ্ছে না। বই বিক্রি না হলে দোকানদাররা প্রকাশকদের কাছ থেকে বই কিনবে কেন!’

সরকারি প্রণোদনা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘না , আমরা কোন প্রণোদনা পাচ্ছি না। আমাদের দেখার কেউ নেই। বই এর সাথে শুধু প্রকাশক আর বিক্রেতারা নয় বরং লেখক বুদ্ধিজীবী শিক্ষক সবাই জড়িত। সাহিত্য সংস্কৃতি টিকে না থাকলে জাতি গঠন সম্ভব না। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত আমাদের দিকে নজর দেওয়া।’

কথা হয় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির বিভাগীয় ও জেলা কমিটির সেক্রেটারি কাজী সাবের আহমেদ এর সাথে। তিনি একই সাথে জমজম প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী । তিনি বাংলাধারাকে জানান, ‘আন্দরকিল্লা মার্কেটে একসময় ২২০ টার মত দোকান ছিল কিন্তু এখন কমতে কমতে ১২০ টার নিচে নেমে আসছে। করোনার কারণে কিছু দোকান বন্ধ হয়ে গেছে আবার অনেকে ব্যবসা পরিবর্তন করে অন্যদিকে চলে গেছেন। আবার অনেকে দোকানের স্টাফ সংখ্যা কমিয়ে ফেলেছেন খরচ কমানোর জন্য। আমরা সরকারের কাছ থেকে কোন ধরণের প্রণোদনা পায় নি।’

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন