৩১ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি ছালামত উল্লাহ’র ইন্তেকাল

কক্সবাজার প্রতিনিধি  »

কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও জেলা আইনজীবী সমিতির (বার) সাবেক সভাপতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য এড‌ভোকেট ছালামত উল্লাহ (৮৪) ইন্তেকাল করেছেন। রবিবার  (৬ জুন) রাত সোয়া ৮ টার দিকে চট্টগ্রা‌মের পাঁচলাইশস্থ পার্কভিউ হাসপাতা‌লে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। গত তিনদিন আগে হার্ট অ্যাটাক হলে তাকে পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে জানিয়েছেন মরহুমের ছেলে রিয়াজ মোহাম্মদ শাকিল। সোমবার জুহুরের নামাজের পর বেলা ২টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে প্রয়াতের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এডভোকেট ছালামত উল্লাহ ১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কক্সবাজার শহরের বাহারছরার সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মরহুম নজীর আহমদ ও রত্নগর্ভা জয়নাব বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান।
১৯৫৫ সালে কক্সবাজার হাই স্কুল হতে ম্যাট্রিকুলেশন, ১৯৫৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ হতে এইচএসসি, ১৯৬০ সালে ঢাকা সলিমুল্লাহ কলেজ হতে বি.এ ও ১৯৬৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে এলএলবি সম্পন্ন করে পরের বছর জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগ দেন।
তিনি কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে জেলা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’র আমীর থাকাকালীন কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে একাধিকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এডভোকেট ছালামত উল্লাহ ১৯৬৫ সালের ১৩ আগস্ট নবীন আইনজীবী হিসেবে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির প্রায় ৯শ’ সদস্যের মধ্যে তাঁর ক্রমিক নম্বর এক। এসময় তিনি সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস), এসোসিয়েট প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি), দি অবজারভার, দৈনিক জনপদ পত্রিকার কক্সবাজার প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। সেসময় কক্সবাজার প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভূমিকা রাখেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কক্সবাজার জেলা শাখার যাত্রা শুরু হয় এবং তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও তিনি ততকালীন মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। সভাপতি ছিলেন কক্সবাজার ইসলামি সমাজ কল্যাণ সংসদ ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার। তিনি জেলার স্কাউটস কমিশনার ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান, মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি ছিলেন।
নানা গুণের অধিকারী প্রয়াত সালামতুল্লাহ কক্সবাজার ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা, কক্সবাজার আইন কলেজ, কক্সবাজার মহিলা কলেজ, কক্সবাজার সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। তিনি দীর্ঘদিন কক্সবাজার আইন কলেজে ইসলামিক আইন বিষয়ে পাঠদান ও ভাইস-প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন। কক্সবাজারের সাহিত্য বিকাশে তার অবদান রয়েছে। তিনি কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমির জীবন সদস্য। তিনি সাংবাদিকতা বিষয়ক বইসহ নানা গ্রন্থ লিখেছেন।
প্রয়াত সালামতুল্লাহ ১৯৯৬ সালে এডভোকেট হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভিজিটরস ফোরামে যোগ দেন। যেখানে আমন্ত্রিত হয়ে ১৯৫২ সালে অতিথি হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৬১ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদত, ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান, ১৯৬৬ সালে শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্ট রাজা সিংহ প্রেমাদাসা ও ১৯৬১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্ধ্রা গান্ধী প্রমূখ অতিথি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ বাজারঘাটা এডভোকেট ছালামত উল্লাহ সড়কের বাসিন্দা এডভোকেট ছালামত উল্লাহ বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর আমেরিকা প্রবাসী সন্তান কবি সাহেদ সা’দ উল্লাহ’র কাছে আমেরিকার নিউইয়র্কে থাকতেন।
প্রয়াতের পরিবার সূত্র জানায়, প্রায় ৬ মাস আগে তিনি বাংলাদেশে এসে তাঁর একমাত্র কন্যা নাসরিন সুলতানা’র চট্টগ্রামের বাসায় থাকতেন। সেখানে এডভোকেট ছালামত উল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ৩ দিন আগে তাঁকে চট্টগ্রাম শহরের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী এডভোকেট ছালামত উল্লাহ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অত্যন্ত স্বজ্জন, ভদ্র, বিনয়ী, সহজসরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত এডভোকেট ছালামত উল্লাহ মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩ ছেলে ও এক কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
প্রবীণ এই আইনজীবীর মৃত্যুর সংবাদে কক্সবাজারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কক্সবাজার প্রেসক্লাব, জেলা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, জেলা আইনজীবী সমিতিসহ নানা সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ।
বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন