৩০ অক্টোবর ২০২৫

ব্যবসা হারিয়ে মোটরবাইক এখন জীবিকার একমাত্র পথ

শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »

ধরণীর বুক জুড়ে বিষাদের বার্তা নিয়ে আসা করোনায় যেমন গিয়েছে মানুষের প্রাণ তেমনি করে মানুষ হারিয়েছে জীবিকা। জীবন শব্দটির প্রতিটি পরতে পরতে যেন জীবিকারই আহ্বান।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের’ হিসাব বলছে, করোনার কারণে দেশে চাকুরী হারানোর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন প্রায় দেড় কোটি মানুষ। এছাড়া গত ২১ দিনে বাংলাদেশে চাকুরী হারিয়েছে ১২ থেকে ১৩ মিলিয়ন মানুষ। শুধু চাকুরী নয়, ব্যবসা ক্ষেত্রে আরো বড় থাবা বসিয়েছে করোনার আঘাত। দীর্ঘ দিন লকাডউনে কেউ হয়েছেন সর্বস্বান্ত, কেউ হয়েছেন ঋণগ্রস্ত। কেউবা আবার হারিয়েছেন তার জীবিকার একমাত্র নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম কদূরখীল এলাকার সন্তান সাজেদুল ইসলাম। দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা এবং জীবিকার তাগিদে থাকছেন নিজ শহর চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম সিটি কলেজে থেকে সম্পন্ন করেছেন বি,কম। এরপর ভারতে পাড়ি জমিয়ে দিল্লী বিশ্বিবদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন বিবিএ এবং এমবিএ। ছোট বেলা থেকেই ব্যবসার প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকেই ২০০৩ সালে চট্টগ্রাম জিইসি মোড় এলাকার সেন্ট্রাল প্লাজায় ৫ লক্ষ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করেন কাপড়ের ব্যবসা। সাইজা নামে ছিলো একটি কাপড়ের দোকান। এরপরের পথটা যেন আরো মসৃণ। সাইজা থেকে প্রিয়সী বুটিকস নামে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করেন একই জায়গায়। সবকিছু চলছিলোও ঠিকঠাক। শুরুর দিকে মাসিক আয়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তারপর ক্রমান্বয়ে সে আয় বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ১ লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায়।

মা,বাবা, স্ত্রী এবং তিন সন্তান জুহাইয়া, জারিফা ও ওয়াজিহাকে নিয়ে সুখের সংসার সাজেদুলের। থাকতেন নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির একটি ভাড়া বাসায়। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে নিজেই ক্রয় করেছেন জমি, কিনেছেন শখের কার এবং দুইটি বাইক।

তবে ২০২০ সালের ২৬ শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে থমকে যায় জনজীবন, বন্ধ হয়ে যায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আর সুখ নামক শব্দটি অন্তরায় হতে থাকে সাজেদুলের জীবন থেকে। করোনার প্রাদুর্ভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ী সাজেদুলের ৫০ লক্ষ টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রিয়সী বুটিকসের ক্ষতি পুষতে না পেরে বাধ্য হয়ে সে প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দিতে হয় ২১ লক্ষ টাকায়। প্রতি মাসে লক্ষ টাকার আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিক্রি করে দিতে হয় শখের কারটিকেও। ৩৫ হাজার টাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে ১৭ হাজার টাকার বাসায়।

এভাবে অনেকটা মানসিকভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েন ব্যবসায়ী সাজেদুল ইসলাম। আর্থিক টানাপোড়নে পড়তে থাকেন তিনি। ব্যবসা হারিয়ে শেষ পর্যন্ত শখের বাইক গুলো নিয়ে যুক্ত হন রাইড শেয়ারিং অ্যাপসে। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে সবকিছু হারিয়ে রাইড শেয়ারিং করে বর্তমানে সংসারে টানাপোড়ন কাটানোর চেষ্টা করছেন তিনি। মাসিক এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা আয় করা সাজেদুল বর্তমানে সংসারের হাল টানছেন মাত্র ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা আয় করে।

জিইসি মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজায় নিজের প্রতিষ্ঠান প্রিয়সী বুটিকসের মালিকানা এখন অন্য জনের হাতে। জীবনে এমন পরিস্থিতির কথা কখনো ভাবেননি সাজেদুল। এখনও সেই আগের দিন গুলোতে ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সুস্থ এবং সুন্দর সময়ের অপেক্ষায় তিনি। ফিরে পেতে চান হারানো সময় গুলো।

বাংলাধারাকে তিনি বলেন, ‘জিইসি মোড়ের সেন্ট্রাল প্লাজায় এখন আর আমি যাইনা। কারণ, নিজের কষ্টার্জাতিত অর্থ দিয়ে গড়া প্রিয়সী বুটিকসের মালিকানা আজ অন্যের হাতে, এটা ভাবলেই আমি যেন কেমন হয়ে যাই। আমি এখনও প্রত্যাশা করি, আমার পুরোনো ব্যবসায় ফিরে যেতে।’

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন