২৯ অক্টোবর ২০২৫

জামাতের ডোনার, বিএনপি নেতার ছেলে এখন ছাত্রলীগের নেতা!

বাংলাধারা প্রতিবেদন  »

নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হোসেন মোহাম্মদ আশরাফ নামের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা উক্ত মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিতে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে রয়েছেন।

জানা যায়, আশরাফ বিএনপিপন্থী ডাক্তারদের সংগঠন ডক্টর্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ শাখার নির্বাচিত সদস্য ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ডা. দেলোয়ার হোসেনের দ্বিতীয় পুত্র। স্থানীয়দের কাছে ডা. দেলোয়ার হোসেন জামাতের ডোনার হিসেবে খ্যাত বলেও জানা যায়।

মেডিকেল কলেজ ও জেলা ছাত্রলীগের সূত্রে জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে যাতে বেকায়দায় না পড়তে হয় তাই ডা. দেলোয়ার নিজ নামে ক্লিনিক খুলে এবং গোপনে জামাতকে অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখে। এছাড়া, আশরাফকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে এনে কুমিল্লায় নিজের নাজুক অবস্থান আরো সংহত করতে ব্যাপক অর্থ নিয়ে মাঠে নেমেছেন ড্যাব নেতা ডা. দেলোয়ার হোসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের এক সদস্য জানায়, আশরাফ ২০১৭ সালে আধিপত্য বিস্তারের গ্রুপিংয়ে দল ভারী করতে নতুন শিক্ষার্থীদের জোর জবরদস্তি করে নিজের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা চালায়। এসময় মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. মনির হোসেন বাধা দিলে আশরাফ দলবেঁধে ডা. মনিরের উপর হামলা চালায়। সেই হামলায় ডা. মনিরের হাত ভেঙে তিন টুকরো হয়ে যায়। এই ঘটনায় কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। মামলায় হোসেন মোহাম্মদ আশরাফকে ৫ নং আসামী করা হয়। পরবর্তীতে কিছু চিকিৎসক নেতাকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আশরাফ পার পেয়ে যায় বলেও জানান মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের এই সদস্য।

ঘটনার সত্যতা জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. মনির হোসেন এর সাথে। তিনি বাংলাধারাকে বলেন, আশরাফসহ আরও বেশ কয়েকজন আমার উপর হামলা চালায়। এসময় আমি গুরুতর আহত হই। এই ঘটনার পর কলেজ থেকে আশরাফসহ কয়েকজনকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তখন কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তালিকা পাঠালেও কোন এক অজানা কারণে কমিটি থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়নি।

‘কুমিল্লার জমিন’ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ

তিনি আরো বলেন, কলেজ থেকে বহিষ্কারের পর আশরাফের বাবা-মা ও নোয়াখালীর উচ্চ পদে থাকা অনেক রাজনৈতিক নেতারা আমার কাছে আসে। আমাকে বলে আশরাফকে যেন ক্ষমা করে দিই, কলেজ থেকে বহিষ্কারের আদেশ তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। এসময় তাঁরা কথা দেয় আশরাফ আর কখনো কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত থাকবে না। মন দিয়ে পড়ালেখা করবে। তখন আমি মানবিক বিবোচনা করে কলেজ থেকে সব অভিযোগ তুলে ফেলি। কিন্তু এই ঘটনার কয়েক মাস যেতে না যেতে আশরাফ আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে ও ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও শিবিরের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে পরোক্ষ ভূমিকায় নামে।

‘কুমিল্লার জমিন’ অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক সদস্য জানান, আশরাফের বাড়ি কুমিল্লা হলেও সে জেলা ছাত্রলীগের স্বাস্থ্য সম্পাদক পদে আসতেও জোর প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বিতর্কিত কর্মকান্ড ও পারিবারিক রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য সে অনুসন্ধানে বাদ পড়ে ও কোন পদবী পায়নি। এতে করে, মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে সে আরো মরিয়া হয়ে ওঠে এবং বিপুল অর্থ নিয়ে বর্তমানে সক্রিয় আছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত ছাত্রলীগ কর্মী ও তৃণমূলে হতাশা বিরাজ করছে। এসময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের হস্তক্ষেপও কামনা করেন ছাত্রলীগের সদস্যরা।

এই বিষয়ে জানতে হোসেন মোহাম্মদ আশরাফের সাথে যোগাযোগ করা হলে বাংলাধারাকে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। দেখুন, কেউ একটু উপরে উঠতে চাইলে তার পিছনে অনেকে লেগে থাকে, আমার অবস্থাটাও এমন। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করি, সেখানে জামাত-বিএনপির সাথে আমাকে মিশিয়ে দেওয়াটা হাইস্যকর। এছাড়া আমার বাবার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলোও সব বানোয়াট।

তিনি আরো বলেন, ডা. মনির হোসেনের হাত ভাঙ্গার ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। সেদিন ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অনাকাঙ্খিতভাবে ডা. মনির হোসেনের উপর হামলা হয়। এই ঘটনায় আমাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়, পরে তা নোয়াখালী ছাত্রলীগের তত্বাবধানে মিমাংসা করা হয়। আর আমি কখনো কোথাও বলিনি যে আমি আর রাজনীতি করবো না। এই প্রমাণ কেউই দেখাতে পারবে না।

এই ব্যাপারে কথা বলতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এর সাথে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা সত্বেও কোন সংযোগ পাওয়া যায়নি।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন