২৯ অক্টোবর ২০২৫

করোনাকালে রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রেকর্ড

শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »

করোনার প্রভাবে স্থবির অর্থনীতিতেও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আদায় দেখলে যে কারো চোখ কপালে ওঠে যেতে পারে। রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড গড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক স্টেশনটি।

দেশের ৯২ ভাগ আমদানি রপ্তানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে, আর এর শুল্কায়নে কাজ করে থাকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের আরো প্রায় ১ মাস বাকি থাকতেই গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

গত অর্থ বছরে অর্থ্যাৎ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে শুল্ক ও আমদানি আদায়ের কাজে নিয়োজিত সংস্থাটির মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিলো প্রায় ৪১ হাজার ৮ শত ৫৩ কোটি টাকা। তবে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে গত ১১ মাসে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। গত ১১ মাসের হিসাব বিবেচনায় চলতি অর্থ বছরের চেয়ে মোট রাজস্ব বেশী আদায় হয়েছে ৭ হাজার ২শত ২৩ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ১১ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫৩৭২৬.৫৭ কোটি টাকা যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৭ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ১১ মাসে লক্ষমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ ভাগ রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জন্য সংশোধিত রাজস্ব লক্ষমাত্রা ৬৪৩০৩.৬০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত রাজস্ব লক্ষমাত্রা ৫৯২৬১.১৭ কোটি টাকা। এই লক্ষমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪৪৮৩৩.৮৭ কোটি টাকা । ১১ মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমান ১৪,৪২৭.৩ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে ১১ মাসে লক্ষমাত্রার চেয়ে ২৪ দশমিক ৩৫ ভাগ রাজস্ব কম আদায় হয়েছে তবে গত অর্থ বছরে সেটি ছিলো ৩০ শতাংশ।

২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের মে মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিলো ৩১১৪.২৫ কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের মে মাসে সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ৫০১৪.৭৭ কোটি টাকায় যা গত বছরেরর মে মাসের তুলনায় ১৯০০.৫২ কোটি টাকা বেশী। সুতরাং ১৯০০.৫২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় বেশী হয়েছে।

২০২০-২০২১ অর্থবছরের শুরুতে ৩ মাস রাজস্ব আদায়ে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি হলেও পরবর্তীতে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ধনাত্নক হারে অব্যাহত থাকে। চলতি অর্থবছরের মে মাসে রাজস্ব লক্ষমাত্রার চেয়ে ১৭.৬৯ শতাংশ টাকা কম আদায় হয়েছে যদিও বিগত অর্থ বছর থেকে চলতি অর্থ বছরে মে মাসের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি পেয়েছে যেটি ছিলো ৬১.০৩ শতাংশ।

এছাড়া এ অর্থবছরের জুলাইতে ৩২৯৩.৫৩ কোটি টাকা, আগষ্টে ৩২৬৪.৮৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৩৮১৬.২৬ কোটি টাকা, অক্টোবরে ৩৮৭১.০৮ কোটি টাকা, নভেম্বরে ৩৭৭০.০৩ কোটি টাকা, ডিসেম্বরে ৩৬৪৮.৬৬ কোটি টাকা, জানুয়ারিতে ৪০৮০.১১ কোটি টাকা, ফেব্রয়ারিতে ৪২১০.৪০ কোটি টাকা, মার্চে ৫০৭৬.৭২ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৪৭৮৭.৪৫ কোটি টাকা এবং মে মাসে ৪৯৩৬.৯৩ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের একটি ব্যবধান কিন্তু থেকে যাচ্ছে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের ব্যবধান সবচেয়ে কম ছিলো মার্চ মাসে। যার পরিমাণ ছিলো ঋণাত্মক ৭.০৫ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশী ছিলো আগষ্ঠ মাসে যটি ছিলো ঋণাত্মক ৩৭.৩০ শতাংশ। তাছাড়া ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এ ব্যবধান সবচেয়ে ছিলো মে মাসে যেটি ছিলো ঋণাত্মক ৪৩.৬২ শতাংশ। চলতি অর্থ বছরে সে ব্যবধান কমে এসেছে ঋণাত্মক ১৭.৬৯ শতাংশে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের গত ২৬ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের তথ্য পর্যালোচানায় দেখা যায় শুধুমাত্র ৫ অর্থবছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। এর মধ্যে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে মাইনাস ৫.১৯ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিলো। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিলো গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে। যেটি ছিলো মাইনাস ৩.৯৬ শতাংশ।

রের্কড পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বাংলাধারাকে বলেন, করোনাকালীন সময়ে দেশের সবধরণের অফিস বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ সবসময় সজাগ দৃষ্টিতে ছিলো রাজস্ব আদায়ে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ সবসময় সুশাসনের প্রতি বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কেননা শুল্কায়নে যদি সুশাসন থাকে তাহলে বন্দরে পণ্য আমদানি বেশী হবে।তাছাড়া তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় রাজস্ব ফাঁকি, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির ব্যাপারে কাউকে ছাড় দিই না।

তবে লক্ষ্য মাত্রা অর্জনের চেয়ে প্রবৃদ্ধির ব্যবধান নিয়ে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে করোনার প্রভাবে গত অর্থবছরের চেয়ে মাইনাস ৩.৯৬ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিলো। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, উচ্চ শুল্কের বেশ কিছু পণ্য আমদানির পরিমান কমে গেছে। যার কারণে লক্ষমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ের একটি ব্যবধান চলতি অর্থবছরেও থেকে গেছে।

সবকিছু মিলিয়ে রাজস্ব আদায় রেকর্ড পরিমাণ হওয়ায় অনেকটা সন্তুষ্ট চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন