বিশেষ প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিরুদ্ধে উপহারের নামে সবচেয়ে বেশী আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশের নিয়োগ বিধিমালায় এ ধরণের কোন প্রচলিত বিধান নেই, এমন অভিযোগ করেছে জেলা পুলিশের কয়েক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এ ধরণের প্রণোদনার টানে সিএমপিতে অভিযানের মাত্রা বেড়েছে এমন অভিযোগ খোদ পুলিশেরই। এর ফলে থানার কাজে অহেতুক ঢিলেমি চলছে।
সিএমপি’কে কর্তব্যপরায়ণ প্রণোদনার বিষয়টি এখন টক অব দ্যা পুলিশ। পুলিশের অভিযানের ওপর দেশের কোন বিভাগীয় শহরে এ ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা থাকলেও তা সামান্য। তবে কেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে, ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি), পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এমনকি জেলা পুলিশেও তেমন সাড়া নেই বলে খোদ অন্য মেট্রোপলিটন ও বিভিন্ন পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে। এ খাতে প্রতিমাসে খরচ হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রশ্ন উঠেছে এই অর্থ যোগানের উৎস নিয়েও।
এ ব্যাপারে সিএমপি’র ডিসি (নর্থ) মোখলেছুর রহমান বাংলাধারার এ প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘প্রত্যেকটি মেট্রোপলিটন এলাকায় অভিযানের বিপরীতে ভাল কাজের জন্য অর্থ ও সার্টিফিকেট দিয়ে উৎসাহিত করা হয়। এ ধরণের অর্থের উৎস পুলিশের সেবা ফান্ড থেকেই আসে। কমিশনার মহোদয় ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত করেন।’

এ ব্যাপারে সিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাধারার প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্য করা ততটা সহজ নয়। তবে অভিযানে থাকাদের এ সভায় অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার ও ভাল কাজের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন স্তরের পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফ’দেরকে নগদ টাকা ও সম্মাননা সনদ প্রদান করা হয়। তবে অর্থের উৎস পুলিশের সেবা তহবিল হতে বলা হলেও সেবা তহবিল গঠনের সুনির্দিষ্ট তথ্য আমার জানা নেই।’
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যরা সরকারী বেতন স্কেলে গ্রেড অনুযায়ী বেতন পাচ্ছেন কিন্তু কেন তাদেরকে সেবা তহবিল হতে প্রণোদনা দেওয়া হবে? প্রশ্ন উঠেছে এমন সেবা তহবিল কি জেলা পুলিশের নেই? এছাড়াও দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরগুলোতে কেন এমন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে না, কেন বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে? জেলা পুলিশ ও বিভিন্ন বিভাগীয় শহরের মেট্রেপলিটন পুলিশকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। পুলিশ রেশন নিচ্ছে, সরকারী কোয়ার্টারে থাকছে, যারা অভিযান করছে তারা সোর্স মানিও পাচ্ছে। সরকারী গাড়ী অভিযানে ব্যবহার করছে, বেসরকারী গাড়ী কেবল মাত্র তেল খরচে ব্যবহার করছে এমনকি বেসরকারী গাড়ীর চালকের বেতনও দিচ্ছে না এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে কয়েক বছরের। সিএমপি’র সেবা তহবিল হতে এ ধরনের আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। কিন্তু এ সেবা তহবিলের উৎস কোথায় এমন প্রশ্ন খোদ পুলিশেরও?
কেন মেট্রো বা জেলা পর্যায়ের পুলিশ বিভাগে এ ধরণের উৎসাহী অর্থ সুবিধা প্রদানের মাত্রা কম তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে এ ধরণের প্রণোদনায় অভিযানের সফলতা তুলে ধরা হলেও জেলা পুলিশের ক্ষেত্রে এ ধরণের সুযোগে কেন দুর্বল। এমনকি ক্ষোভ জন্মাচ্ছে বিভিন্ন মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের মাঝে।
অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, মামলার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার ও ভাল কাজের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সফল অভিযানের জন্য আর্থিক ও লিখিত সদন প্রদানের কথা বলা হচ্ছে সিএমপি থেকে। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি দেশের অন্যসব মেট্রো এলাকার ও জেলা পুলিশ সফল অভিযান করছে না। নাকি অপরাধ অনুসন্ধানে ও নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেতন পাচ্ছে না।
আরো অভিযোগ উঠেছে, মাস শেষ না হতেই মাঝামাঝি সময়ে ওই মাসের সফলতা বা বিফলতার তালিকা কিভাবে হল? এমন প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি পুলিশের কয়েক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে।

মূলত, পুলিশের মাসিক অপরাধ সভায় পুলিশ কমিশনার নগরীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, সকল থানা ও ডিবি’কে যৌথভাবে কাজ করার পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়া সকল জোনের ডিসিদের স্ব স্ব জোনে মাদক ও ছিনতাই প্রতিরোধে অধিকতর তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন। অভিযান পরিচালনায় ডিসিদেরকে তদারকি করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। রুজুকৃত মামলা ও অভিযোগ সমূহের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশি সেবা নিশ্চিত করতে বলেন।
সিআইডি’তে ভাল কাজের উৎসাহের বিষয়ে সিআইডির চট্টগ্রামের স্পেশাল পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, আমাদের এখানেও ভাল কাজের কর্মরতদের উৎসাহিত করা হয়। তবে তা চট্টগ্রামে নয়, ঢাকা থেকেই পুরষ্কৃত করা হয়। এখান থেকে তালিকা করে পাঠানো হয়।
প্রত্যেক সিএমপি কমিশনারগণ বিভিন্ন সময়ে দামপাড়াস্থ পুলিশ লাইন্সসের মাল্টিপারপাস সেডে সিএমপি কমিশনারের সভাপতিত্বে প্রত্যেক মাসের কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ ধরনের সভায় সিএমপি কমিশনার সিএমপিতে কর্মরত সকল স্তরের পুলিশ সদস্যদের সমস্যার কথা শুনেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধান দেন। বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে তিনি সিএমপি’র সেবা তহবিল থেকে পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফ’দেরকে টাকা প্রদান করেন।
অভিযোগ উঠেছে তাৎক্ষণিক সমস্যার কথা বলা হলেও আগে থেকেই তালিকা করা থাকে, যেসব পুলিশ সদস্যদের আর্থিক ভাবে সহায়তা করা হবে। কারণ এ ধরনের মাসিক অপরাধ সভায় শুধু নগদ অর্থই নয় সনদও প্রদান করা হয়।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













