দেবাশীষ বড়ুয়া রাজু »
অদম্য ইচ্ছা আর নিরলস প্রচেষ্টায় গো-খামার করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে উঠে এসেছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার খরণদ্বীপ গ্রামের গৃহবধু মনোয়ারা বেগম। আপন উদ্যেগে গো-পালন করে এলাকায় গড়ে তুলেছেন আদর্শ একটি ডেইরী ফার্ম। এলাকায় যেটি ‘পিউর ডেইরী ফার্ম’ নামে পরিচিত।
৪৫ বছর বয়সী মনোয়ারা বেগম বর্তমানে একজন আদর্শ গৃহিনী হিসাবে নয় শুধু উদীয়মান উদ্যাক্তা হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন তার কর্ম প্রতিভায়। তার স্বামী মোহাম্মদ ইউনুস একজন সরকারী কর্মকর্তা। এক ছেলে দুই মেয়ে তাদের সংসারে। ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্ব অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত। সেক্ষেত্রে তিনি একজন সফল জননীও বটে।

তিনি বলেন, গ্রামের শিশুদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে গরুর তরল দুধের ব্যাপক অভাব। শিশুরা যদি ছোটকালে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে না পারে তাহলে জাতি গঠনে এ শিশুরা পিছিয়ে পড়বে। জাতির স্বার্থে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন একটি দুগ্ধ খামার প্রতিষ্ঠা করবেন। তার অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ২০১৬ সালে ৩টি গাভী নিয়ে শুরু করেন খামার।
পরিচিত গো-খামারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, প্রাণী চিকিৎসকদের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে গেলেন তিনি। স্থান নির্ণয়, গাভী ক্রয়, লোক নিয়োগ সবটিতে স্বামীর সহযোগীতা চাইলেন। স্বামী ইউনুচ তাতে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং সাহস দিলেন।

মনোয়ারা বেগম প্রথমে বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ে অল্প জায়গায় একটি সেড তৈরি করে ২লক্ষ টাকায় উন্নত জাতের ফিজিশিয়ন ও অষ্ট্রেলিয়ান ৩টি গাভী ক্রয় করেন। তাতে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে সাহস যোগান তার স্বামী মোহাম্মদ ইউনুছ। যেমন গাভীগুলোর পরিচর্যা আর খাবারের ব্যবস্থা করা এবং রোগ-বালাইয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া কিছুতে আর বেগ পেতে হয়নি।
খামারে এখন ৩১টি গরু রয়েছে। উৎপাদিত হচ্ছে দৈনিক ১২০-১৩০ লিটার দুধ। প্রতি লিটার ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি করছেন মনোয়ারা। প্রতি কোরবানের ঈদে বিক্রি করেন গরু। এবারের ঈদ উপলক্ষেও বিক্রির জন্য ৬টি গরু করেছেন মোটাতাজা।
শুরুটা হয়েছিল বাড়ির অল্প কিছু জায়গায়। এখন ৮০ শতক জায়গায় দাঁড়িয়েছে খামার। খামারের দেখাশোনার জন্য রয়েছে ৫জন কর্মচারী। গরুর খামারের সাথে সবজি চাষ, হাঁস, দেশি মুরগি ও ছাগল পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। পুকুরে করেছেন মাছের চাষ। এ খামারের নিরাপত্তায় ও সার্বক্ষণিক তদারকিতে লাগানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। গরুর পরিচর্যায় ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্র ও প্রযুক্তি। এ খামারের গো-খাদ্যের যোগানের জন্য আলাদা করে ৬০ শতক জমিতে লাগানো হয়েছে জার্মান ঘাস। খামারের গোবর সবজি চাষে সার হিসেবে ব্যবহার করেছে। পরিকল্পনা রয়েছে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট করার।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ে কর্মরত চিকিৎসকদের সার্বিক পরামর্শ পেয়ে আসছেন জানিয়ে মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ও গো-খাদ্যের দাম বাড়তি থাকায় কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছিল। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে সরকার সম্প্রতি ২০ হাজার টাকা প্রণোদনা দিয়েছেন।’
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারী সার্জন ডা. আবদুল্লাহ আল মামুন সাগর বলেন, ‘মনোয়ারা বেগমের খামার দেখে এলাকার অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন গবাধিপশু পালনে। বোয়ালখালীতে অনেক নতুন তরুণ উদ্যোক্তা গবাধিপশুর খামার গড়তে পরামর্শ নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। এসব উদ্যোক্তারা দেশে দুধ ও মাংসের চাহিদার এক বিশাল যোগানদাতা। ফলে দেশের চাহিদা মিঠাতে বিদেশ নির্ভর হতে হবে না।’

মনোয়ারার বেগমের স্বামী মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন- সাহস, ইচ্ছা এবং আগ্রহ থাকলে মানুষ যে সবকিছু করতে পারে তার একটি জ্বলন্ত প্রমাণ আমার স্ত্রীর এই প্রতিষ্ঠান। প্রথমে আমার দুর্সাধ্য মনে হয়েছিল। লোকশানের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু না আল্লাহর অপার মহিমায় খুব ভাল হয়েছে। গ্রামের বাড়ীতে এধরনের একটি প্রতিষ্ঠান টিকে থাকলে সকলের জন্য একটি মঙ্গলবার্তা। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে স্বচ্ছল পরিবারের সবার প্রোটিন চাহিদা মেটাচ্ছে তাতে আমার খুবই আনন্দ লাগছে।
বাংলাধারা/এফএস/এআর













