বিশেষ প্রতিবেদক »
গহীন অরণ্যে ঘেরা পার্বত্য জেলা বান্দরবান। গহীন অরণ্যকে ঘিরে মাদক চাষীরা মাদক উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। গাঁজার পাশাপাশি আফিমও উৎপাদন করছে আদিবাসীরা। শুধু উৎপাদনেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। এরপর প্রক্রিয়াজাত করে এসব মাদক পাচার করছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসলেও পাচার হচ্ছে আফিম। এসব চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসীরা। এমন তথ্য পাওয়া গেছে র্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে। গত এপ্রিলে এক অভিযানের পর আফিম উদ্ধারের এমন ঘটনায় পার্বত্য জেলায় আবারও আফিম চাষের বিষয়টি উঠে এসেছে।
র্যাব-৭ এর পক্ষ থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বান্দরবান সেনা রিজিয়নের পক্ষ থেকে পাহাড়ি অরণ্যে মাদক চাষ বন্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এসব অভিযানে মাদকের বিভিন্ন বাগান পুড়িয়ে দেয়াসহ মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিছুদিন বন্ধ থাকলেও মাদক কারবারিরা পাহাড়ি অরণ্যের গহীনে গিয়ে পুনরায় গাঁজা ও আফিম উৎপাদন অব্যাহত রাখে। এরপর তা আবার প্রক্রিয়াজাত করছে। প্রক্রিয়াজাত শেষে এসব মাদক পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ মিয়ানমারেও এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে বান্দরবান সেনা রিজিয়ন ও র্যাব-৭ এর হাতে গ্রেফতার হওয়া মউসিং ত্রিপুরা।
আরো জানা গেছে, বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় মাদক কারবারিদের আঁখড়া। মাদক পাচারের উদ্দেশ্যে সন্ধ্যার পর সেখানে জড়ো হয়। এদিকে, থানচি থানাধীন সদর ৩ নং ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট খ্যাত এলাকাটি মাদক পাচারে ও বিক্রয়ের অন্যতম স্থান। জিরো পয়েন্টের তিন রাস্তার মোড় এলাকাটি ওই এলাকার মাদক বিনিময়ের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
উল্ল্যেখ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আফিম উদ্ধারের ঘটনা বিরল। সর্বশেষ ধানচি এলাকায় আফিম বিক্রয়ের জন্য জড়ো হয় মাদক ব্যবসায়ীরা। এমন তথ্য ছিল র্যাব সেভেনের ইন্টেলিজেন্স টিমের কাছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে বান্দরবান সেনা রিজিয়ন ও র্যাব-৭ এর যৌথ টিম মউসিং ত্রিপুরা নামের মাদক ব্যবসায়ীকে ধরার পর আফিম চাষের অনেক তথ্য জেনে যায় র্যাব সেভেন।
মউসিং ত্রিপুরা বান্দরবানের থানচির তিন্দু ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার বাসিন্দা। ইউনিয়নের মাংলুং হেডম্যান পাড়ায় বসবাস করে। রুমা থানাধীন কমলা বাগান উন্নয়ন বোর্ড পুনর্বাসন এলাকার অংথহা ত্রিপুরার ছেলে।
মউসিং ত্রিপুরাকে আটকের পর যৌথবাহিনী ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আফিম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত বিষয়ে অনেক তথ্য পেয়েছে র্যাব সেভেনের সদস্যরা। আটকের সময় মউসিং ত্রিপুরার কাছ থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা থেকে বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় লুকানো প্রায় ৪ কেজি আফিম উদ্ধার করা হয়। এসব আফিমে বাজার মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
র্যাব-৭ এর জিজ্ঞাসাবাদে মউসিং ত্রিপুরা জানিয়েছে, সে বিভিন্ন সময়ে আফিম উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করে আসছে। এমনকি প্রক্রিয়াজাতকৃত আফিম প্লাস্টিক মুড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে আসছে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের গহীন অরণ্যে আফিমের চাষ করে মউসিং ত্রিপুরাসহ আরও কয়েকজন। নিজেরাই এসব আফিম চাষের পর প্রক্রিয়াজাত করে পাচারের জন্য বিভিন্ন সময়ে থানচির জিরো পয়েন্ট এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান নেয়। সেখানেই ক্রেতারা উপস্থিত হয়ে আফিমের লেনদেন করে। এমনকি প্রক্রিয়াজাতকৃত আফিম পাইকারি মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













