মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
উচ্চ শিক্ষার বুক ভরা আশা নিয়েও নিরাশ হতে হয় সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীদের। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের কেন্দ্র নির্ধারণ জটিলতায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সদ্বীপের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আসন বিন্যাস করা হয় সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার পর ৫৫ কিলোমিটার দূরে থাকা চট্টগ্রাম কলেজে। ফলে ওই উপজেলার শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষায় হয়রানির শিকার হচ্ছে। এতে উচ্চ শিক্ষার প্রতি অনিহা চলে আসছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অনার্স পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণ নিয়ে বির্তক অনেক দিনের। অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের অজ্ঞতার কারণে কোন কোন কলেজের পরীক্ষার্থীদের ৭০/৮০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়।
আরও অভিযোগ উঠেছে পরীক্ষার্থীদের অধ্যায়নরত কলেজ থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের দূরত্ব বিবেচনা না করেই কেন্দ্র নির্ধারণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা সম্পূর্ণ অমানবিক ও ভোগান্তীর কারণ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জন্য। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেশের ৬৪টি জেলায় বিভিন্ন কোর্সের বা বিষয়ের অনার্স পরীক্ষা কেন্দ্র প্রায় ২৭০টি । অভিযোগ উঠেছে, সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীরা নিজেদের কলেজে পরীক্ষা দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের তুঘলকি সিদ্ধান্তের কারণে। তথা চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে সবসময় পরীক্ষা দিতে হয়। অথচ রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান কলেজের পরীক্ষার্থীরা স্ব স্ব কলেজে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশ্ন, সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীরা কেন নিজেদের কলেজে পরীক্ষা দিতে পারবে না।

সন্দ্বীপের মোস্তাফিজুর রহমান কলেজ, সরকারী এবি কলেজ ও আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষায় অনীহা প্রকাশ করছে। কারণ স্পীড বোট বা লঞ্চে সমূদ্র পাড়ি দিয়ে আবার পরিবহনে নগরীর চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে হয়।
এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক ফয়জুল করিম প্রতিবেদককে বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারন হয় বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও কলেজের সংখ্যার উপর। নিজ কলেজে পরীক্ষা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারনে অনেক নিয়মনীতি রয়েছে। ৫/৭ কিলোমিটার দূরত্বে কেন্দ্র থাকার পরও কেন প্রায় ৫০ কিমি. দূরে সেন্টার দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ভাল বলতে পারবেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কেন্দ্র নির্ধারন বিজ্ঞপ্তি তথ্য প্রযুক্তি দফতরের পরিচালককে ওয়েবসাইটে দেশের ৭টি বিভাগের ৬৪টি জেলায় ২৭০টি পরীক্ষা কেন্দ্রের তালিকা দেওয়া হয়। এছাড়াও ২৭০টি কেন্দ্রের সুপারভাইজিং কর্মকর্তা হিসেবে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব পালনের জন্য চিঠি প্রেরণ করা হয়। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগীয় প্রধান, ভাইস চ্যান্সেলর দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার ও সচিব, প্রো- ভাইস চ্যান্সেলর দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রারগণ। সেই তালিকা অনুযায়ী বেশ কেয়কটি কলেজের পরীক্ষার সেন্টার নির্ধারন নিয়ে শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্র থেকে মীরসরাই নিজামপুর কলেজের দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটারেরও বেশী, হাটহাজারী কলেজ ৩৫ কিমি, রাউজান কলেজ ৪২ কিমি, সীতাকুন্ড কলেজ ৩৭ কিমি, বার আউলিয়া কলেজ ২৯ কিমি, ফটিকছড়ি কলেজ ৫৫ কিমি, সন্দ্বীপের হাজী এবি কলেজ ও হাজী মোস্তাফিজুর রহমান কলেজ সড়ক পথে ২৯ কিমি ছাড়াও স্পীড বোটে আরো আধাঘন্টার সমূদ্রপাড়ী, তাও আবার নির্ভর করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকার ওপর, ভাটিয়ারীর বিজয় স্মরণী কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে ২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম কলেজে পরীক্ষা দিতে হয়।
ফটিকছড়ি কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০ কিলোমিটার ও রাউজান কলেজের শিক্ষার্থীদের ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে হাটহাজারী কলেজে, গাছবাড়িয়া সরকারী কলেজকে ২০ কিলোমিটার ও কর্ণেল অলি আহমদ বীর বিক্রম কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পটিয়া সরকারী কলেজে পরীক্ষা দিতে হয়। ইমাম গজ্জালী কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রায় ৩০ কিলোমিটার, রাঙ্গুনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীরা ৪২ কিলোমিটার, স্যার আশুতোষ সরকারী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীরা ৩০ কিমি. এবং আনোয়ারা কলেজের শিক্ষার্থীরা ২৫ কিমি. পাড়ি দিয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন হাজেরা-তুজ কলেজে পরীক্ষা দিতে হয়।
কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কেন আবার কেন্দ্র পরিবর্তন করে হয়রানি করা হচ্ছে। এছাড়াও শহর থেকে ৫০/৬০ কিমি দূরে থাকাদের শহরে কোন আত্মীয় স্বজন না ধাকায় হোটেল কিংবা বোর্ডিং এ থাকতে হয়।
এদিকে, নোয়াপাড়া কলেজের পরীক্ষার্থীদের ৩৫ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে নগরীর এম ই এস ওমর গণি কলেজে পরীক্ষা দিতে হয়। হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থীদেরকে ৩০ কিমি, সন্দ্বীপের মোস্তাফিজুর রহমান কলেজ, সরকারী এবি কলেজ, আলহাজ মুস্তাফিজুর রহমান কলেজের শিক্ষার্থীরা স্পীড বোট বা লঞ্চে সমূদ্র পাড়ি দিয়ে নগরীর চট্টগ্রাম কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে হয়। তবে আকাশের অবস্থা যদি কিঞ্চিত খারাপও হয় তাহলে সন্দ্বীপের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে পারবে না। কারণ লঞ্চ ও স্পীডবোট সার্ভিস বন্ধ থাকে আবহাওয়া খারাপ হলে। অথচ সন্দ্বীপের শিক্ষাথীরা সেখানকার যেকোনো কলেজে পরীক্ষা দিতে পারতো, যদি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়।
আরো অভিযোগ উঠেছে, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের ধারণা নেই দেশের কোন অঞ্চলের মানুষ কিভাবে জীবনযাপন করে। কারণ কক্সবাজারের মহেশখালী ও সন্দ্বীপের মানুষের জীবিকা দেশের অন্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন। আকাশের বা আবহাওয়া পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করেই স্পীড বোট বা লঞ্চ চলাচল করে। মহেশখালী ও সন্দ্বীপ থেকে লঞ্চে ২/৩ ঘন্টা সময় লাগে সড়ক পথে যাত্রা শুরু করতে। আর স্পীড বোটে পৌছাতে সময় লাগে ১০/১৫ মিনিট। মহাসড়কে আরো ২৫ কিমি দূরে পৌছাতে সময় লাগবে কমপক্ষে সোয়া একঘন্টা।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













