সায়ীদ আলমগীর »
কক্সবাজারে ইয়াবা ্আগ্রাসন ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ৫ লাখ ১৮ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় আটক হয়েছেন চার রোহিঙ্গাসহ ছয় জন। বৃহস্পতিবার রাত হলে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সময়ে বিজিবি, র্যাব এবং যৌথ চেকপোষ্টে অভিযান চালিয়ে এসব ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর সিপিসি-২ হোয়াইক্যং ক্যাম্পের ইনচার্জ (এএসপি) শাহ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে খবর আসে বালুখালী ১৯ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি বাড়িতে ইয়াবা মজুদ রয়েছে। উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে আটটার দিকে আমরা সেখানে অভিযান গিয়ে মৃত জাহিদ হোসনের ছেলে কলিম উল্লাহ (৪২) এবং তার ছেলে কেফায়ত উল্লাহ (৩২)কে আটক করি। কিন্তু আটককৃতরা ইয়াবার সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি অস্বীকার করায় ইয়াবার সন্ধান পেতে বেগ পেতে হচ্ছিল। এছাড়া ক্যাম্পের অভ্যন্তরে ইয়াবার সাথে সম্পৃক্ত অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। ফলে কোন অবস্থা ইয়াবার সঠিক তথ্য পাচ্ছিলাম না। এক পর্যায়ে রাত দুইটার দিকে দুটি বাড়ির মধ্যখানে বেড়া ভেঙ্গে মাটি কুঁড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার এবং অন্য আরেকটি স্থান থেকে আরো ১ লাখ ৩৮ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে আটককৃতরা স্বীকার করেছেন, এসব ইয়াবা তাদের স্বজনরা রেখে গেছেন। এসময় জব্দ করা হয়েছে মিয়ানমারের ২৮ হাজার কিয়াটও। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে ইয়াবাসহ তাদের উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপরদিকে, র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) আব্দুল্লাহ মো. শেখ সাদী বলেন, একইদিন রাত ১২টার দিকে দিকে কক্সবাজারের লিংক রোড় এলাকা থেকে ইয়াবা পাচারের অভিযোগে আরো দুই রোহিঙ্গা যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫। তাদের হাতে থাকা শপিং ব্যাগ থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
আটকরা হলো, উখিয়ার বালুখালী রাহিঙ্গা ক্যাম্প-১২ এর এইচ ব্লক-৪ এর বাসিন্দা আবুল হাশেমের ছেলে মো. সাদেক (১৯) এবং ক্যাম্প ১৩- এর বি-১ ব্লকের বাসিন্দা নুর বশিরে ছেলে ফয়সাল (১৯) ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে লিংক রোড় পুলিশ বক্সের পাশে তারা অবস্থান করছে খবর পেয়ে র্যাবের একপি দল অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। তারা দীর্ঘদিন উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকা হতে ইয়াবা সংগ্রহ করে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আসছে বলে স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে কক্সবাজার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
অন্যদিকে,কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের মরিচ্যা বিজিবির যৌথ চেকপোষ্টে একটি কর্ভাটভ্যান তল্লাশী চালিয়ে বিশেষ কায়দায় লুকানো ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ইয়াবা পরিবহণের অভিযোগে চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে কর্ভাটভ্যান ও দুটি মোবাইল। শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকাল নয়টার সময় ইয়াবাসহ তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন, নোয়াখালী জেলার উক্তর ওয়াবদার চরদরবেশ গ্রামের ফেরদৌস আলমের ছেলে ও কর্ভাটভ্যান চালক শরিফ উল্লাহ (২৫) এবং হেলপার ভোলা চরফ্যাশান থানার চরআইচা গ্রামের আব্দুল আজিজ পলোয়ানের ছেলে সাদ্দাম হোসেন (৩১)।
৩০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল ইব্রাহীম ফারুক তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একটি কাভার্ডভ্যান (চট্ট মেট্টো-ট-১১-৫৬৬২) টেকনাফ থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান ঢাকার দিকে রওয়ানা হয়েছে, এমন তথ্যের উপর ভিত্তিতে সকালে নিজেই মরিচ্যা যৌথ চেকপোষ্টে এসে গাড়ি তল্লাশী জোরদার করি। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কাভার্ডভ্যানটি চেকপোষ্টে আসার সাথে সাথে থামিয়ে গাড়ির চালক ও হেলপারকে আটক করা হয়।
ধৃত দুইজনকে ইয়াবা পাচারের বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ইয়াবা পাচারের বিষয় অস্বীকার করে। পরবর্তীতে চেকপোষ্টে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা কাভার্ডভ্যানে ব্যাপক তল্লাশী শুরুর এক পর্যায়ে চালকের কেবিনে বিশেষভাবে কোমল পানীয়র বোতলের মধ্যে লুকায়িত অবস্থায় ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। কর্ভাটভ্যান ও দুইটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা করে রামু থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান বিজিবি অধিনায়ক।
আবার, ৩৪ বিজিবির একটি টিম শুক্রবার বেলা ২টার দিকে উখিয়ার একটি পাহাড়ে লুকানো অবস্থায় আরো ১ লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক আলী হায়দার আজাদ আহমেদ জানান, শুক্রবার বেলা দুইটার দিকে ৩৪ বিজিবির আওতাধীন রেজু আমতলীর দুই কিলোমিটার পশ্চিমে করইবনিয়া নামক স্থানে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ ইয়াবা লুকিয়ে রেখেছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবির টিম সেখানে অভিযান চালিয়ে পাহাড়ী জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশী করে লুকায়িত অবস্থায় ১৬ কার্টুনে ১ লাখ ৬০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান বিজিবি কর্মকর্তা।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













