২৮ অক্টোবর ২০২৫

শাহ আমানত বিমানবন্দর সড়ক যেন মরণফাঁদ

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »

শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে যাতায়ত পথগুলো যেন আগতদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। বিমানবন্দরে প্রবেশের দুটো রাস্তাই যেন এখন যাত্রীদের কাছে দুর্ঘটনার অন্যতম ফাঁদ। রাস্তার বেহাল দশা দেখে প্রাইভেট গাড়ী ব্যবহারকারীরা থাকেন চরম আতঙ্কে। রাস্তার এমন দশা বিশেষ করে বিদেশী যাত্রীদের অনেকটা নাক কুঁচকে কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়ার উপক্রম। খনাখন্দে ভরে থাকা রাস্তা মাড়িয়ে যাওয়া আসা করতে হয় এয়ারপোর্টে।

শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর সড়কের মুখে চেকপোস্টের সামনে খনাখন্দ

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে আগ্রাবাদ থেকে নৌবাহিনীর জহিরুল হক ঘাঁটি পর্যন্ত রাস্তার বেশিরভাগ অংশ টিনের ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে উভয় দিকে সরু রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয় পাবলিক ও প্রাইভেট পরিবহন। কাস্টমসের মোড় পার হলেই সল্টগোলা রেল ক্রসিং থেকে শুরু করে চিটাগাং এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (সিইপিজেড) পর্যন্ত ট্রাফিক জ্যাম থেকে নিস্তার নেই কোন ক্ষণেও। কারণ সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ রাস্তার কোন ফুরসত নেই। তিন চাকার রিক্সা থেকে শুরু করে  ২২ চাকার ট্রেইলার পর্যন্ত সব গাড়ীই চলছে। প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার গাড়ী চলাচল করে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে।

বঙ্গবন্ধু টানেলের সম্মুখভাগে কর্দমাক্ত সড়ক

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে একদিকে সরু সড়ক অন্যদিকে ইট বালু আর সিমেন্টের মিশ্রিত কাদামাটি যেন একফুট পরিমান স্তরে পরিণত হয়েছে মূল সড়কের উপর। তবে নৌ বাহিনীর হাসপাতাল পার হয়ে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে চলা সড়কটি সোজা প্রায় ৭  কিমি. পাড়ি দিলেই যেন এয়ারপোর্ট। কিন্তু এই পথচলায়ও বিপত্তি বিভিন্ন বৃহদায়তন স্থাপনার নির্মাণ কাজ চলছে এই সড়কে।

ফলে মাটি ভরাটের ডাম্প ট্রাক থেকে শুরু করে সিমেন্ট আর কংক্রিটের মিক্সার মেশিন প্রতি নিয়ত চলাচল করছে। ফলে ভারী যানবাহনের চাপে পড়ে ছোট যানবাহন গুলো রয়েছে চাপের মুখে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে বিমানের যাত্রীরা পৌঁছাতে পারছে না বিমানবন্দরে। চট্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট তথা নিউমার্কেট মোড় থেকে এয়ারপোর্ট প্রায় ১৬ কি.মি. যেতে নিজেদের গাড়ীতেই ঘন্টার উপরে সময় লেগে যায়। কর্মঘন্টা আর শ্রমঘন্টা সবগুলোই যেন এ সড়কের যাত্রীদের কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।

বঙ্গবন্ধু টানেলের যন্ত্রপাতি ও বিনষ্ট লোহার সামগ্রী

শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের আরেকটি সড়ক এখন পরিচিতি পেয়েছে চিটাগাং আউটার রিং রোড প্রকল্পের শুরু থেকে। অনেকটা সাগরিকা স্টেডিয়ামের পেছন থেকে শুরু হলেও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের বাইপাস থেকে শুরু হয়েছে বন্দর টোল রোড। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বন্দরের কন্টেইনারবাহী ট্রেইলরগুলো ওই সড়ক ব্যবহার করার কথা থাকলেও এখন ছোট পরিবহনও ঝুঁকি নিয়ে চলছে। প্রতিদিনই বড় গাড়ীর চাপে পড়ে ছোট গাড়ীগুলো দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে এ সড়কে।

আগে বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে বিমানবন্দরের যাত্রীরা টোল রোড দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের সামনে দিয়ে সল্টগোলা ক্রসিং হয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়া আসা করতো। কিন্তু এখন চউকের আইটার রিং রোড হওয়ার কারণে এয়ারপোর্ট যাত্রীদের অনেকটা সুবিধা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণযজ্ঞ চলমান থাকায় প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। পতেঙ্গা সী-বিচ থেকে টানেলের শুরু পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা খুবই নাজুক। গর্ত ঢেকে গেছে কাদা মাটিতে। ফলে ছোট গাড়ীগুলো চলতে হয় বড় গাড়ীর পেছনে পেছনে। অন্যথায় গর্তে পড়ে ছোট গাড়ীগুলো দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে।

বাটারফ্লাই পার্কের সামনের রাস্তায় পানি জমে তৈরী হয়েছে জলাশয়

এয়ারপোর্টের পুরাতন সড়ক ধরে কতদূর গেলেই বাটারফ্লাই পার্ক। পার্কের সেই সড়কেও শান্তি নেই এয়ারপোর্টের যাত্রীদের। বাটারফ্লাই পার্কের সামনের রাস্তাটা প্রায় পানিতে ডুবে থাকে। পানি আরেকটু বাড়লেই ছোটখাটো ডোবায় পরিণত হবে। নেভাল সড়ক ধরে এয়ারপোর্ট রোডে প্রবেশে এখন খনাখন্দকে ভরা। শুধু ফ্রেশ আছে এয়ারপোর্ট চেকপোস্ট থেকে বিমানবন্দরের স্থাপনা পর্যন্ত।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন