২৮ অক্টোবর ২০২৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস

মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক»

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় পাশেই ময়লার ভাগাড়। কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতনদের মনে। তবে অভিযোগ উঠেছে ইচ্ছাকৃতভাবে পৌর মেয়রদের নির্দেশনায় মহাসড়কের দু’পাশকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা হচ্ছে। জলাশয় ভারাটের টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছে ভূমিদস্যুরা। এতে পৌরসভাগুলো অনেকটা প্রতিযোগীতায় নেমেছে এমন মন্তব্য চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগের। সাইনবোর্ড লাগিয়েও পৌর মেয়রদের এমন কর্মকান্ডকে দমানো যাচ্ছে না। ফলে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

এদিকে পথচারী আর পরিবহনের যাত্রীদের নাকাল অবস্থা। কারন আকাশে বাতাসে উড়ছে ডাস্টবিনের বিষাক্ত ও দূষিত জীবাণু। এ সড়কে চলমান বেশিরভাগ পরিবহনই আচ্ছাদিত নয়। ফলে চালক থেকে শুরু করে হেলপার ও যাত্রী কেউই বাদ পড়ছে না দূষিত অক্সিজেন থেকে। শুধু তাই নয়, খোলা এই ময়লার ভাগাড়ে খাদ্য নিবারনে আসছে পশুপাখি থেকে শুরু করে মানসিক প্রতিবন্ধিরাও। আর রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে চলা পথচারীরাও দু’হাতে নাক চেপে ধরেও দুর্গন্ধ থেকে নিস্তার পাচ্ছেন না। এমনকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস, জীপ ও কারের যাত্রীরাও বাদ পড়ছেন না। কারন এসির এয়ারফিল্টারের মাধ্যমেও আংশিক দুর্গন্ধ গাড়ীতে প্রবেশ করা মাত্রই অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে উচ্চবিত্তদের।

অভিযোগ রয়েছে, সীতাকুন্ড, মীরসরাই ও বারৈয়ারহাট পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ময়লার ভাগাড় বানানো হয়েছে মহাসড়কের পাশে থাকা কয়েকটি স্পটকে। মেয়রদের নির্দেশনা অনুযায়ী সংগৃহীত ময়লা ফেলা হচ্ছে এমন তথ্য সেবকদের। নির্দেশ অমান্য করলে কটু কথা শুনিয়ে দেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি চাকরী খেয়ে ফেলার হুমকীও দেওয়া হয় এসব নিরীহদের। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে সেবকরা  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে ইউনিয়নবাসীদের উচ্ছিষ্ট ও ময়লা আবর্জনা  ফেলতে বাধ্য হয়। 

আরো অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড থানাধীন বড় দারোগার হাট এমন একটি ভাগাড় রয়েছে। ওই এলাকার ওভারলোড গাড়ীর স্কেল এলাকায় রয়েছে সুবিশাল এক ময়লার ভাগাড়। সাদা বক, শালিক, কাক ছাড়াও শিয়াল কুকুরের উপস্থিতিও কম নয়। শুধু তাই নয় মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষও খাবারের সন্ধানে সেখানে অবস্থান নেয়। কাকপক্ষী আর প্রাণীকুলের সঙ্গে এসব ময়লার ভাগাড়ের জীবাণু চলে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে। এসব জীবাণু থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানা রোগব্যাধী। এমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকেও ময়লার ভাগাড় সরাতে কোন ধরনের চিঠি  চালাচালী বা অভিযোগ নেই। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এমন উদাসীন ভূমিকায় উদ্বিগ্ন উপজেলাবাসী।

সচেতন নাগরিকেদের পক্ষে মীরসরাই মিঠাছরা টেন্ডল বাড়ীর আব্দুল কায়েস বাংলাধারাকে বলেন, ময়লা না ফেলতে মেয়রদের উদ্দেশ্যে সওজ সাইনবোর্ডও লাগিয়েছে। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এখানে ময়লা ফেলবেন না, ‘মিডিয়ান এলাকায় ময়লা ফেলবেন না’ কিন্তু কে কার কথা শোনে। যেন আরো বেশি করে ময়লা ফেলার মহোৎসব চলছে। ভুগতে হচ্ছে পথচারী আর যাত্রীদের। তবে বসবাসকারীরাও কোনভাবে পার পাচ্ছেন না। ভাগাড় এলাকার আবাসস্থলগুলোতে নিত্য রোগ বালাই লেগেই রয়েছে।

এ ব্যাপারে মিরসরাই উপজেললার পৌর মেয়র মোহাম্মদ  গিয়াস উদ্দিনকে মুঠোফোনে জানতে চাওয়ার আগেই তিনি প্রতিবেদককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি অপরপ্রান্ত থেকে অনেকটা বিরক্তির স্বরে ‘হ্যালো হ্যালো করে মুঠোফোনের কল বাতিল করে দিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক প্রকৌশলী  বাংলাধারাকে বলেন, মেয়রদের ব্যাপারে কিছু বললে সরকারী উন্নয়ন ব্যহত হবে। তবে ময়লার ভাগাড়ের স্থানে আমাদের পক্ষ থেকে নির্দেশনা মূলক সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। কিন্তু কার কথা কে শোনে। মনে হয় ময়লা ফেলতে নিষেধ করায় মেয়রের লোকজন নিরুৎসাহিত না হয়ে উৎসাহিত হয়েছে। এমনকি ময়লা ফেলে কৌশলে পাশ্ববর্তী জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। এতে জলাশয়ের মূল্য হবে ষোলগুণ। উপজেলা এলাকায় মূল্যবান ভূমি তৈরী হবে ভাগাড়ের ময়লায়।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন