মুজতবা সউদ »
রমা চৌধুরী। দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রথম মহিলা, যিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন ১৯৬১ সালে। এরপর কর্মজীবন শুরু করেন কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেব।
১৯৭১ সালে তাঁর স্বামী যখন ভারতে তখন তিনি বোয়ালখালীতে তাঁর বাবার বাসায় ছিলেন। ১৩ মে দালালদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী বাহিনী হানা দেয় সেখানে। মা, সন্তানদের সামনেই তাঁর সম্ভ্রমহানি করে ওরা। গান পাওডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বাড়ি। অন্ন, বস্ত্র ছাড়াই তাঁকে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। ধরা পড়েছেন, আবারো নির্যাতিতা হয়েছেন। সন্তানরা অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। দাহ করেন নি তিনি, দাফন করেছেন।

এরপর, তিনি লিখতেন; একটানা। এক প্রকাশক তা ছাপিয়ে দিতেন। খালি পায়ে হেঁটে তা বিক্রী করতেন রমা চৌধুরী। অনেকেই জুতা স্যান্ডেল কিনে দিয়েছেন, দিতে চেয়েছেন। নেন নি তিনি, পড়েন নি। কারণ তাঁর সন্তানরা এই মাটির নিচে। সেই মাটিতে তিনি স্যান্ডেল পায়ে হাঁটতে পারবেন না।
২০১৭ সালে উনি গুরুতর অসুস্থ হলে আমি তাঁকে দেখতে যাই। আমাকে চট্টগ্রামে সহায়তা করেন অনুজ প্রতিম সাংবাদিক ফেরদৌস শিপন। যে খুপরিতে বসে রমা চৌধুরী লিখতেন, শিপন সেখানেও আমাকে নিয়ে গেছে। আলাপ হয়েছে তাঁর লেখা গ্রন্থের প্রকাশকের সংগেও। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রমা চৌধুরীকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসার সকল খরচ বহন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
এক বছরেরও বেশি সময় চিকিৎসাধিন থাকার পর ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন রমা চৌধুরী। থেমে যায় স্বাধীনতার পর থেকে খালি পায়ে চলতে থাকা জীবন সংগ্রাম।
শ্রদ্ধা, শ্রদ্ধা এবং শ্রদ্ধা এই জননী, এই বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার প্রতি।
লেখক : মুজতবা সউদ
সংবাদিক ও গল্পকার
বাংলাধারা/এফএস/এফএস