২৬ অক্টোবর ২০২৫

সামনে পর্যটন মৌসুম ; বেহাল সেন্টমার্টিনের জেটি !

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

চলছে শরৎ কাল। ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। প্রকৃতিতে শীতের আবহ শুরুর মধ্য দিয়ে পর্যটনের সকল দুয়ার খুলছে ক্রমে।

আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বপর্যটন দিবস। এটি পালনের মধ্য দিয়েই মূলত শুরু হবে বছরের আনুষ্ঠানিক পর্যটন বছর। সেই ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন কক্সবাজারের পর্যটনসেবীরা।

কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের ভ্রমণের আরাধ্য স্থান প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। পূর্বের মতো এখানে পর্যটক আনা-নেয়া করতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে জাহাজ নামানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সেন্টমার্টিন দ্বীপে নামতে স্থাপিত একমাত্র জেটির বেহাল দশায় চলতি বছরে এখানে পর্যটক আনা-নেয়া নস্যাৎ হবার শংকা দেখা দিয়েছে। অবহেলায় ভাঙছে দ্বীপের চারপাশ। সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে দ্বীপের একমাত্র কবরস্থানও। এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সেন্টমার্টিন নৌ-রুটে চালানো একাধিক জাহাজের পরিচালক পর্যটন উদ্যোক্তা তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, গেল কয়েকটি বছরে বয়ে যাওয়া ঘুর্ণিঝড়- জ্বলোচ্ছ্বাসের তান্ডবে সেন্টমার্টিন জেটির অনেকাংশে ভেঙে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পল্টুন। সর্বশেষ গত ২৭ মে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জেটিটি আরেক দফা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এমনকি জেটির পাশে ট্রলার ভিড়ানোর অংশ পর্যন্ত ভেঙে গেছে। যে কারণে অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জেটি। কিন্তু দ্বীপকে ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দেয়াদি বিনিয়োগ করেছে। ‌’হেমন্ত-শীত ও বসন্ত’ এ সময়টাতেই দ্বীপে পর্যটন মৌসুম। সামনে মৌসুম শুরুর তোড়জোড় হচ্ছে। কিন্তু জেটির বেহাল দশার কারণে বিনিয়োগকারিরা আজ দিশেহারা। প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন বাঁচাতে রক্ষাবাঁধসহ বিধ্বস্ত জেটিটি অবিলম্বে সংস্কার জরুরী। না হলে পর্যটন খাতে জড়িত অন্তত অর্ধলাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে।

জেটি সংস্কারের দাবিতে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পদক্ষেপ বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদ আরো বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক পারাপারে ৮-১০টি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, শতাধিক মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ ট্যুরিস্ট গাইড এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ ৫০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা সেন্টমার্টিনকে ঘিরে পরিচালিত হয়। এ সকল কর্মকাণ্ডের একমাত্র মাধ্যম সেন্টমার্টিন জেটি। অনেক দিন জেটিটির সংস্কার নেই। কিন্তু দ্বীপের প্রবেশদ্বার জেটি ছাড়া দ্বীপ একেবারে অচল। আর আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জেটির মেরামত করা না গেলে পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাশাপাশি সরকার বিপুল রাজস্ব হারাবে। আর্থিক ক্ষতিরমুখে পড়বে এখাতে সম্পৃক্ত প্রায় অর্ধলাখ মানুষ।

দ্বীপের অবস্থা তুলে ধরে তোফায়েল বলেন, কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বিরাট একটা অংশ সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যান। তাদের জন্য দ্বীপে গড়ে ওঠেছে দুই শতাধিক হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউজ। রয়েছে শতাধিক রেস্তোরাঁ। শীত মৌসুমে দ্বীপবাসীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের একমাত্র আয়ের উৎস পর্যটন। তাই পর্যটনকে পুঁজি করে প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে। বছরে মাত্র ৫-৬ মাসের ব্যবসার আয়ের টাকায় ১২ মাস চলে দ্বীপের বাসিন্দা ও উদ্যোক্তারা। জেটিটি দ্রুত সময়ে সংস্কার না হলে বন্ধ হয়ে যাবে আয়ের উৎস।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন, পদক্ষেপ বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলা শাখার উপদেষ্টা এমএ হাসিব বাদল, এসএম কিবরিয়া খান, সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তোহা, সহসভাপতি ইফতিকার আহমদ চৌধুরী, এসএ কাজল, নুরুল আলম রনি ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. আল আমীন বিশ্বাস তুষার। পর্যটন ব্যবসায়ী ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানের হয়ে সাহাব উদ্দিন জনি, জামাল উদ্দিন, জনি ভুইয়া, ফোরকান জুয়েল। এসময় বিভিন্ন পর্যটনসেবী প্রতিষ্ঠানের ট্যুর গাইডরাও উপস্থিত ছিলেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপের কোন মানুষ অসুস্থ হলে জেটি ব্যবহার করে উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফে যাওয়া কঠিন। দ্বীপবাসী তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য আনা-নেওয়া করতে পারে না। জেটির কারণে দ্বীপের লোকজন মারাত্মক ক্ষতি ও ভোগান্তির শিকার। এই পরিস্থিতিতে জেটি পারাপার কোনভাবেই সম্ভব নয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞার কারণে সরকারি কাজগুলো করা না গেলেও রহস্যজনক কারণে বেসরকারি স্থাপনা ঠিকই উঠছে। অথচ এখানে নৌ-বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নানা দপ্তর কাজ করে। জরুরী প্রয়োজনে আসা-যাওয়ায় এসব সংস্থাও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহি হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, সেন্টমার্টিনের জেটিটি জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণাধিন। এটি প্রতি অর্থবছরে নিলামের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়। চলতি ১৪২৮ বঙ্গাব্দেও এটি নিলাম হয়েছে এক কোটি ২২ হাজার টাকায়। এর আগে ৭০-৮০-৯০ লাখ এভাবে নিলাম হয়েছে। জেটিটি অনেক আগেই ব্যববহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। অথচ এটি ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় হলেও আমরা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন জেটি স্থাপনে হাত দিতে পারছি না। এরপরও জরুরী চলাচলে বেহাল দশা কাটাতে জেটিটি সংস্কারে আদেশ পেতে চলতি মাসের ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। ৪২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া আছে। নির্দেশনা এলে দ্রুত সংস্কারে হাত দেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে সেন্টমার্টিনে একটি অত্যাধুনিক জেটি নির্মাণের উদ্যোগ হাতে নেবো। এ সংক্রান্ত যতেষ্ট ফান্ড আমাদের রয়েছে।

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন